লন্ডন: ১৯৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন মেজর অশোক তারা। আর তাকে দেখেই চিনতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন হাসিনা। বললেন, তিনি অস্ত্র ছাড়াই আমার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় দেয়া এক সাক্ষাতকারে অশোক তারা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য দিল্লীতে হওয়া ‘সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাকে ও আমার স্ত্রীকে দেখে খুবই খুশি হয়। তিনি মোদীজিকে বলেন, আমি কোন অস্ত্র ছাড়াই তাকে এবং তার পরিবারকে উদ্ধার করেছিলাম।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করলেও অস্ত্রধারী একদল পাকিস্তানী সৈন্যের কাছে বন্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর পাশাপাশি বন্দী হিসেবে ছিলেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সন্তানেরা।
বর্তমানে অবসর নেয়া সামরিক কর্মকর্তা অশোক তারা ১৯৭১ সালে মেজর ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করার পর তৎকালীন মেজর অশোক তারাকে বেগম ফজিলাতুন্নেসাসহ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হয়। সে সময় ২৯ বছর বয়সে বীরচক্র উপাধি পাওয়া এই মেজর মাত্র তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে মিশনে নেমে পড়েন।
কিন্তু তাদের পথে বাধা ছিল অস্ত্রধারী পাকিস্তানি সৈন্যরা। তারা আত্মসমর্পণের বিষয়টি সম্পর্কে জানত না। উল্টো মেজর তারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের বিষয়টি জানানোর পরও তারা সেটি মেনে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানী সৈন্যরা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের নিরাপত্তার দাবি করে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে জিম্মি হিসেবে রাখে। অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অশোক তারা জানান, আমরা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাই। তারা শর্ত দিয়েছিল, কোন ক্ষয়-ক্ষতি না করে তাদের নিজ পরিবারের কাছে (পাকিস্তানে) ফেরত যেতে দিতে হবে। আমরা তা মেনে নেই। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানী এই সৈন্যদলটিও আত্মসমর্পণ করে।
এ সময় উদ্ধার হওয়া দলটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এবং ২৪ বছর বয়সী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিল তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। কোন প্রকার রক্তপাত ছাড়াই শেষ হয় এই মিশন।
অশোকা তারাকে তার এই অবদানের সম্মান জানানোর জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময় তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মানে ভূষিত করা হয়। -ইত্তেফাক থেকে