কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে কমলগঞ্জ থানা ও শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যবৃন্দ বৃহস্পতিবার ভানুগাছ, শমশেরনগরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে বাজার মনিটরিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে সাধারণ মানুষকে বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া রোধ ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে এক যোগে কাজ করার আহবান জানানো হয়।
জরুরী প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক জনগণ যেনো বাইরে এলে কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান, শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক অরুপ কুমার চৌধুরী, বণিক কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ সদস্যবৃন্দ।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় শমশেরনগর বাজারে মাস্ক, সাবান ও তৈরীকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ঠিলেন শমশেরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সজীব মিঞা, সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম রাজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাভেল আহমদ জয়, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আলমগীর, উপ প্রচার সম্পাদক সাহেল আহমদ এবং দপ্তর সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন, সুজা মেমোরিয়অল কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিনুল ইসলাম রাফি, ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবায়দুল ইসলাম রুবেছ, ৩নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিলুর রহমান তাকিন প্রমুখ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারিভাবে সারা দেশে ছুটি ঘোষণা করে মানুষজনকে নিজ নিজ ঘরে নিরাপদে থাকার কথা থাকলেও চা বাগান সমূহে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়নি। এ ছুটি স্বাস্থ্য সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৫টি চা বাগানে বৃহস্পতিবার সকালে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান নিয়ে সরকারি ছুটি ভোগ শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে শমশেরনগর চা বাগানে পঞ্চায়েত কমিটি ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নিজেরাই ছুটিতে চলে গেছেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি ছুটি ঘোষণার পরও শুধুমাত্র চা শ্রমিকদের এ ছুটির আওতার বাহিরে রাখায় গত কয়েক দিন ধরে সকল চা বাগান শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এনিয়ে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সুশীল সমাজের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ ক্ষোভের ফলে শুক্রবার সকালে শমশেরনগর চা বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে। চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সকালে চা বাগান ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গিয়ে এই মহা দুর্যোগের সময় সারা দেশের মত চা শ্রমিকদেরও ছুটি দিতে জোর দাবি জানায়। আলোচনার এক পর্যায়ে শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি ও উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দ চা বাগান ব্যবস্থাপককে জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ছুটিতে সাধারণ চা শ্রমিক থাকে। ফলে শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চা শ্রমিকরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান নিয়ে সরকারি ছুটি পালন করবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির(অঞ্চলের) কার্যকরি কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত কানু গোপাল, চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সরকারি ছুটি ভোগ করতেই এই কর্মবিরতি। এই কর্মবিরতিই সরকারি ছুটি ভোগ করছে চা শ্রমিকরা। শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত শমশেরনগর, কানিহাটি, দেওছড়া, বাঘিছড়া ও ডবলছড়া চা বাগানের চা শ্রমিকরা সরকারি ছুটি ভোগ করবে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে চাতলাপুর ও আলীনগর চা বাগানসহ কমলগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য চা বাগানের শ্রমিকরাও এ ছুটি ভোগ করবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী শমশেরনগরসহ ৫টি চা বাগানে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ভোগ করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সারাদেশের মত চা শ্রমিকদেরও এই সরকারি ছুটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যেই শ্রম মন্ত্রণালয় ও চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশের চা সংসদের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছিল।
শমশেরনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন গণ মাধ্যমে কোন কথা না বললেও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ৫টি চা বাগানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চা শ্রমিকরা সরকারি ছুটি ভোগ করছে বলেও জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধকালে চা শ্রমিকদের স্ব-মজুরিতে সরকারি ছুটির আওতায়সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে চা শ্রমিক সন্তানদের মানববন্ধন শুক্রবার(২৭ মার্চ) সকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চৌমুহনায় চার শ্রমিক সন্তান একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। শমশেরনগর চা বাগানের চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র প্ররিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্ঠা মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জনসমাগম এড়াতে মোহন রবিদাস এই ধরণের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র প্ররিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্ঠা মোহন রবিদাস বলেন, মরণব্যাধী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সারাদেশে কিছু দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেন। অথচ চা শ্রমিকদের এ ছুটির বাহিরে রাখা হয়। এটা চা শ্রমিকদের প্রতি সরকার ও চা কোম্পানীগুলোর অবহেলা। এক দেশে দুই নীতি চা শ্রমিকরা মানে না ও মানবেও না। অবিলম্বে সকল চা বাগান সমূহে স্ব-মজুরিতে ছুটি দেওয়া হোক। পুলিশি অভিযান চালিয়ে চা বাগানগুলোতে মদের পাট্টা বন্ধ করা হোক। চা বাগানে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশি চেকপোষ্ট বসানো হোক ও করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিরিহ চা শ্রমিকদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জোর দাবী জানানো হয়।
চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র প্ররিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্ঠা মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন পালন করা হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক সন্তান বাবুল মাদ্রাজী, সুজন লোহার ও মনি শঙ্কর রায়। প্রায় আধা ঘন্টা স্থায়ী মানববন্ধন শেষে চা শ্রমিক সন্তারা নিজ ঘরে ফিরে যায়।
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জীবনযাত্রা ব্যাহত। আর সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন দিন মজুররা। আর এই দিনমজুরদের মুখে হাসি ফুটাতে এগিয়ে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ।
শুক্রবার(২৭ মার্চ) বিকাল ৩টায় গাড়ি নিয়ে উপজেলার বাজারে বাজারে ঘুরে রিক্স্রাচলক, ভিক্ষুকসহ হতদরিদ্র অর্ধশতাধিক লোকের মাঝে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন কমলগঞ্জ থানার ওসি মো: আরিফুর রহমান। ভানুগাছ বাজার, শমসেরনগর বাজার ঘুরে ডেকে এনে জনপ্রতি ৫কেজি চাল, ১কেজি ডাল ও ১কেজি আলুসহ অর্ধশতাধিক প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে সবকিছু বন্ধ। এই বন্ধে দিনমজুররা কষ্টে রয়েছেন। তাই মানবিক কারণে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ হতে হতদরিদ্রদের পাশে দাড়িয়েছি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মেধাবী ছাত্র পলাশ স্মৃতি কল্যাণ ট্র্রাস্টের মাস্ক, সাবান ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ হয়েছে। শুক্রবার(২৭ মার্চ )সকাল ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানে ৫০জন দরিদ্র চা শ্রমিকদের মধ্যে একটি মাস্ক, একটি জীবানুনাশক সেভলন সাবান ও এক কেজি ডাল বিতরণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন পলাশ স্মৃতি কল্যাণ ট্রাস্টের প্রধান পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা-কবি বীরেশ্বর সিংহ ও তাঁর সহধর্মিণী শিক্ষিকা ঊষা রানী দেবী। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মাহমুদুল হাসান উজ্জল, শিক্ষক প্রদীপ পাল, অমল গড়, সঞ্জিত পাল ও সুনীল পাল প্রমুখ।
পলাশ স্মৃতি কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা-কবি বিরেশ্বর সিংহ জানান, ২০১২ সালে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের গুলাগুলির সময় এমসি কলেজের মেধাবী ছাত্র তার একমাত্র ছেলে উদয় সিংহ পলাশ মারা যায়। তার নামে তিনি একটি স্মৃতি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে আর্থ মানবতার সেবায় কাজ করেন। তার অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ও খাদ্য সহায়তায় নিজ অর্থায়নে শুক্রবার চা শ্রমিক পরিবারে এসব সামগ্রী বিতরণ করেছেন।