মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে ২ জন রাজাকারের ফাঁসি ও ৩ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বুধবার, ১০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের ৩০তম মামলার রায় এটি।
এই পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতনের পাঁচটি অভিযোগ সন্ধেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় মো. নেছার আলী (পলাতক) ও উজের আহমেদকে (কারাবন্দি) সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অপর তিন রাজাকার সামছুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ, ইউনুছ আহমেদ, মোবারক মিয়াকে অমৃত্যু কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইউনুস আহমেদ ও ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক। গতকাল রায় ঘোষার সময় এই পাঁচ রাজাকারের মধ্যে কারাবন্দি থাকা ইউনুছ ও উজের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শামসুল হোসেন তরফদারসহ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এ মামলায় বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আদেশের জন্য রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ২৬ মে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা।
২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ওইদিন বিকেলেই রাজনগর উপজেলার গয়াসপুর গ্রামের ওজায়ের আহমেদ চৌধুরীকে (৬০) মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা থেকে ও সোনাটিকি গ্রামের মৌলভি ইউনুছ আহমদকে (৭০) তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর গতবছরের ২০ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ট্রাইব্যুনাল গতকালের রায়ে বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই রাজাকার নেছার আলী ও উজের আহমেদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। তবে কারাবন্দি দুই রাজাকার চাইলে ৩০দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে। পলাতকরা আপিল করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পন করতে হবে। পাশাপাশি পলাতকদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে বলা হয় রায়ে।
এই অভিযোগে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় সুশীতল ধরদের বাড়িতে ধর পরিবারের লোকজনসহ হিন্দু সমপ্রদায়ের ১৪ জনকে হত্যার মাধ্যমে হিন্দু সমপ্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উঠে আসে।
গত বছরের ২০ নভেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।