মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের রাজনগরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকের মধ্যে হট্টগোলের জেরে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস খোলা থাকলেও কার্যক্রমে ব্যাঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে গেল কদিন ধরে দলিল লেখকরা ‘কলম বিরতি’ পালন করছেন নিজের থেকে। এতে দলিল লেখকরা জমি রেজিস্ট্রির কাজ না করায় ভূগান্তিতে পড়েছেন জমি ক্রয় বিক্রয়ে আসা উপজেলার আট ইউনিয়নের মানুষ। এদিকে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আনছার উদ্দীনের প্রত্যাহার দাবী ও পুলিশ দিয়ে এক দলিল লেখককে হয়রানি করার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘কলম বিরতি’ চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতি সোম, মঙ্গল ও বুধবার দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। গত সোমবার(১৪ মে) অফিস কার্যক্রম পরে হাসান আহমদ নামের একজন দলীল লেখক কমিশনের আবেদনসহ একটি দলিল পেশ করতে গেলে হাসান আহমদ সাবরেজিস্টারের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন। কি নিয়ে সেই উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডা হয় সেই খবর খুজতে এ প্রতিবেদক কথা বলেন সংশ্লিষ্টদের সাথে।
সাব-রেজিস্ট্রার আনছার উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, “আমি এ অফিসে কার্যভার পাবার পর ধারনা পেয়েছি ওখানে জাল-জালিয়াতি হচ্ছে। এসব জালিয়াতি বন্ধে দলীল লেখকদের উদ্যেশ্যে আমি কয়েকটি নোটিশ দিয়েছি আর এতেই তারা আমার উপর ক্ষুব্ধ।” গত ১৪ মে অফিসের কার্যক্রম শেষে(বিকেল পৌনে ছটার দিকে) দলীল লেখক হাসান আহমদ দলীল ও কমিশনের দরখাস্থ নিয়ে তার কার্যালয়ে এসে বলেন,”এটির কমিশন করে দেন”। ওই দলিলে ১০ জন দাতা রয়েছেন। সম্পাদন করে আনলে পরদিন কাজ করে দেবার কথা বলি। এসময় তিনি উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডা করে বলেন, “আপনি অন্য জনেরটা করেন আমারটা করেন না। আপনি কাল থেকে অফিসে আর আসবেন না।” এসময় তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলে আমাকে প্রাননাশের হুমকি দেন। তাৎক্ষনিক দলীল লেখক সমিতির সভাপতি হিমাংশু চক্রবর্তীকে আমি ডেকে আনি। এছাড়াও আরেক দলীল লেখক সুজিত বাবু উপস্থিত থেকে বিষয়টি দেখেছেন। এ ঘটনায় রাতেই আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন থানায় জিডি করে তাকে শোকজ করেন। পরবর্তীতে পিয়নের মাধ্যমে এ ঘটনার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালে তিনি(হাসান আহমদ) গ্রহন করেন নি। পরে ডাকযোগে তার কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তিনি যখন দলিল রেজিস্ট্রি করেন তখন ফর্সা পুংখানু-পুংখু যাচাই করেন। এতে কোন সমস্যা দেখা দিলে ভূমি অফিসের সাথে যাচাই-বাচাই করে কাগজের সত্যতা বের করেন। এতে তার প্রতি তারা(দলিল লেখকরা) আরো ক্ষুব্ধ। এছাড়াও এখানকার দলীল লেখক নুরুজ্জামানের আগে ওয়ারিসান সনদ জাল করায় তিনি তাকে সাময়িক বরখাস্থ করেছেন। ওই কারণে সে এখনো কোন দলিল জমা দিতে পারছেনা। এছাড়াও আব্দুল ওদুদ নামের আরেক দলিল লেখক ফর্সার জমির শ্রেনী জালিয়াতি করায় সেটি ‘এসিল্যাণ্ড’ কার্যালয়ে যাচাই-বাচাই করে সত্যতা বের করে তাকে শোকজ করে সাময়িক বরখাস্থ করেছি। তিনি দলিল লেখকদের কার্মবিরতির বিষয়ে তিনি নিজে থেকেই বলেন, কলম বিরতি করতে হলে সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেই কলম বিরতি করতে হয়। কিন্তু তারা তা নাজানিয়ে নিজেদের মত করে কলম বিরতি পালন করছেন।
দলিল লেখক হাসান আহমদের সাথে আলাপচারিতা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, গত সোমবার চারটার দিকে দলিল ও কমিশন সম্পাদন করতে গেলে তিনি অতিরিক্ত ফিঃ চেয়ে বসেন। এছাড়াও তিনি সরকারি ফিসের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা চান। এটা নিয়ে তার সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। পরবর্তীতে তিনি আমাকে সাময়িক বরখাস্থ ও শোকজ করেছেন। তিনি আরো বলেন, “এইন কিছু বিকৃত কিছিমের মানুষ”। এসব কারণে আমরা দলীল লেখকরা কলম বিরতি পালন করছি। ওই ঘটনাস্থলে থাকা আরেক দলীল লেখক সুজিত বাবুর সাথে রোববার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “ইতা আর কামনাই এখন জানার”। “আগামী কাল(২১ মে) বইয়া(বসে) একটা কিছু হইতো পারে”। উপজেলা দলীল লেখক সমিতির সভাপতি হিমাংশু চক্রবর্তীর মুঠোফোনে রোববার বিকেলে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ওই ঘটনার পর সাব রেজিস্ট্রার আনছার উদ্দীনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজনগর থানার পুলিশ দলিললেখক হাছান আহমদকে থানায় নেয়ার জন্য গাড়িতে তুলে নেয়। পরে বিষয়টি দলিল লেখক সমিতির নেতারা সমাধান করবেন জানালে পুলিশ তাকে রেখে যায়। এদিকে বিষয়টি দলিল লেখকদের মাঝে জানাজানি হয়ে গেলে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা দুপুরে আবারো বৈঠক করে সাবরেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবী ও বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘কলম বিরতি’ ঘোষণা করেন।
এদিকে দলিল লেখকদের কলম বিরতির ফলে উপজেলা সদরে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে আসা সাধারণ মানুষ ভূগান্তিতে পড়েছেন। দুই দিন ধরে দলিল সম্পাদন না হওয়ায় আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকে।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, জোর করে দলিল সম্পাদন ও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন সাব রেজিস্ট্রার সাহেব। এজন্য পুলিশ গিয়েছিল।