মৌলভীবাজার প্রতিনিধি॥ সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে লুটপাট ও হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার ২১ মার্চ দূপুরে উপজেলা চৌমুহনা চত্তরে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট,বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ কমলগঞ্জ জেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনায় এসে শেষ হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, কমলগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুচিয়াং, সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, পূজা উদয়াপন কমিটির শংকর লাল শাহা, শ্যামল চন্দ্র দাস, মহিলা ঐক্য পরিষদের মুন্না রায়, গীতা রানী কানু, প্রণিত রঞ্জন দেব নাথ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, মুক্তিযোদ্ধা নির্মল দাসসহ অনেকে।
বক্তারা সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা লুটপাটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
হেফাজতি জঙ্গী ডাকাতদল। ছবি: অন্তর্জাল
এদিকে শাল্লার নোয়াগাঁ গ্রামে গত ১৭ মার্চ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর, মন্দিরে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি হেফাজত ইসলামের মামুনুল হক ও তাদের সমর্থকদের হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটতরাজ ও নারীদের শ্লীলতাহানির মত বর্বরোচিত সহিংসতার ৮দিন পর গত ২৫ মার্চ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ী-ঘর দেখতে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। পরে এক সভায় যোগ দেন। এ সময় ধর্মমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরী করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অমানবিক অত্যাচার যারা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করতে হবে। তিনি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র, যুবকসহ সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষকে দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, মুহিবুল হক মানিক এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেন্দ্র দেব মন্টু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব ড. দিলীপ কুমার ঘোষ, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাজ্ঞীর হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান, সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন, শাল্লা উপজেলার চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী। এ সময় বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও ধমীয় নেতা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যসহ বিপুল মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এলাকার মানুষের বক্তব্য, পরিকল্পিত এমন ঘটনা যে ঘটতে যাচ্ছে তা স্থানীয় প্রশাসনের সকলেই জানতেন। তারপরও পুলিশসহ কেউ কোন পদক্ষেপ নেননি। দু’দিন পরে মামলা হয়। অথচ ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ নিজেদের পক্ষ থেকেই মামলা নথিভুক্ত করতে পারে। তা তারা করেনি।
এ পর্যন্ত কথিত যুবলীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়াকে কুলাউড়া থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এ সাথে আরো ২৯জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের রিমাণ্ড আদালত মঞ্জুর করেছে।
শাল্লায় হেফাজতি তাণ্ডবের প্রতিবাদ লণ্ডনে। ছবি: অন্তর্জাল
বিএনপির দাবি, ‘প্রশাসনের গাফিলতি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের প্রচ্ছন্ন মদদে শাল্লার নোয়াগাঁ গ্রামে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা ঘটে। ঘটনা ঘটার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রধান আসামী স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন মিয়া। অন্যান্য আসামীরাও ক্ষমতাসীন দলের। এ পর্যন্ত ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। এলাকায় এখনও আতংকিত গ্রামবাসী বাড়ীতে থাকতে ভয় পেয়ে চরম উৎকন্ঠা ও আতংকের মাঝে দিন কাটাচ্ছে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, শাল্লায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা পরিকল্পিত। গত ২৩ মার্চ দুপুরে তিনি সে এলাকা দেখতে যান। তিনি ঘটনাকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে বলেন, সরকারের পুলিশ প্রশাসন এখানে মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি, তাই অবিলম্বে এখানে যতজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা ছিলেন তাদের সবাইকে প্রত্যাহার করা হোক।
ক্ষতিগ্রস্ত ৯০টি পরিবারকে নগদ ৫হাজার টাকা এবং বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারের মাঝে বাড়তি ৩ হাজার টাকা ও ১ বাণ্ডিল করে ঢেউটিন দেয়া হয়। এ দান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। একই সময় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ পরিবারের মাঝে ৫ হাজার টাকা করে বন্টন করেন।
সব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার করে বাংলাদেশকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত করার দাবি উঠেছে চট্টগ্রামের এক সমাবেশ থেকে। রোববার নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী তরুণ উদ্যোগের আয়োজনে সমাবেশ থেকে এ দাবি ওঠে।
সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিককে চেয়ারপার্সন করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
|