আব্দুল ওয়াদুদ,মৌলভীবাজার থেকে।। কাউয়াদিঘী হাওরে বানের পানি নতুনকরে বৃদ্ধি পেতে থাকায় মৌলভীবাজারের সাথে রাজনগর ও পাশ্ববর্তী বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কাউয়াদিঘি হাওর ঘেষে যাওয়া মৌলভীবাজার-রাজগনর-বালাগঞ্জ সড়কের ৫টি পয়েন্টে কোমর পরিমান পানি এসেছে। এর আগে ওই রুটে বাস চলাচল বন্ধ হলেও এক সপ্তাহ ধরে যাত্রীদের শেষ ভরসা অটোরিক্সা চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সড়ক দিয়ে কুশিয়ারা নদী পাড়ের বালাগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, রাজনগরের ফতেপুর, উত্তরভাগ, পাঁচগাও, রাজনগর সদর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শহরমুখী ছাত্র-ছাত্রী ও অফিস আদালতগামী মানুষ পড়েছেন মহাবিপাকে। অনেকে দিগুন ভাড়া দিয়ে নৌকা নিয়ে যাতায়াতসহ মোকামবাজার-মুন্সিবাজার রুটে রাজনগর সদর ও মৌলভীবাজারে যেতে দেখা যায়।
এদিকে কুশিয়ারা নদীতে যেন পানির লীলা খেলার শেষ নেই। কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। এক সপ্তাহ আগে নদী পাড়ের গ্রামগুলোর রাস্তা-ঘাট, উঠান থেকে বানের জল নামতে দেখা গেলেও চার-পাঁচ দিনের ঠানা বৃষ্টিতে আবার যেন যেই সেই। এই অবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ, ফতেপুর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমূখ, নাজিরাবাদ ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষ গৃহ পালিত পশু নিয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে। মোকামবাজারের ব্যবসায়ী শাহজান মিয়া বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মানুষ একদম নাজেহাল হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ যেন আর পারছেনা। আমাদের ব্যবসায়ও ভাটা পড়েছে। বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতির দিকে গিয়েছে। গত সপ্তাহের প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতিরাতে ঘন্টাব্যাপী ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। ফলে আবারও বাড়িঘর রাস্তাঘাট ডুবতে শুরু করেছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, উপাসনালয় এখনও রয়েছে পানির নিচে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই গিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে বা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। হাওর এলাকার কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষগুলো কর্মহীন থাকায় নেই আয় রোজগারও। যারা নিজ বাড়িতে রয়েছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের এখন অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। গো-খাদ্যের পাশাপাশি গবাদি পশু রাখার জায়গা নিয়েও তারা পড়েছেন সংকটে। খাদ্যহীন, গৃহহীন মানুষগুলো রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে থাকেন। সরকারী ও বেসরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির ও বড়লেখার তালিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস ও জুড়ির জায়ফরনগর ইউপির চেয়ারম্যান হাজী মাছুম রেজা জানান, গত সপ্তাহে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। বুধবার থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হাওরে প্রায় ৫-৬ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। আবারও পানি বেড়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকজনের বাড়ি ফেরা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তীর সাথে রোববার আলাপ হয় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি জানান, আসাম থেকে নেমে আসা ঢলের কারনেই মুলত আমাদের পানি বৃদ্ধি পায়। দুদিন ধরে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর সেকশনে বিপদসীমার ১১ সে:মি ও শেওলাতে ৯১ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কালের (রোববার) তুলনায় দুই যায়গায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমছে। হাকালুকি হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িকিয়ারি বাঁধের জন্য হাকালুকির পানি কিছুটা বাধাগ্রস্থ হচেছ। কুশিয়ারার পানি কমে গেলে হাকালুকিতেও কমবে।