করোণা’র হিংস্র ভয়ঙ্কর এ করুণ বিশ্বসংকটকালে নিজেদের মানুষ হয়ে প্রবাসীদের প্রতি এমন বেআইনী নির্দয় আচরণ কোন মানুষ কি কখনও করতে পারে? এটা অন্যায়, ভীষণ অন্যায়। এই করোনাকালে মানুষ যেখানে করুণা করবে সেখানে আমাদের মানুষগুলো আরো অমানুষ হচ্ছে! গত ২১ জানুয়ারি সিলেটে আসা ১৫৭ জন যাত্রীর ৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ হবার পর সোমবার তাঁদের করোনা পরীক্ষা বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিকের আরটিপিসিআর ল্যাবে করা হলে ২৮ জনের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। অথচ পজেটিভ আসা কারো মধ্যে কোন উপস্বর্গ ছিল না। পরে মঙ্গলবার আবার তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের আরটিপিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হলে ২৫ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট আসে! ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন ১-১৫ জানুয়ারি ১৪ দিন কোয়ারান্টাইন। ১৩ জানুয়ারি আবার ঘোষণা করেন ১৬ জানুয়ারি থেকে ৪ দিন কোয়ারান্টাইন। আবার ২৩ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয় কোয়ারান্টাইন ৭ দিন। ইস্ট লন্ডনের ট্রাভেলস্ ব্যবসায়ী এক ছোট ভাইয়ের সাথে আলাপ করে জানলাম যাঁরা ৪ দিন কোয়ারান্টাইন পলিসি জেনে টিকেট বুক করে দেশে গিয়েছিলেন তাঁদেরকেও ৭ দিন কোয়ারান্টাইন করতে হচ্ছে। ট্রাভেলস্ ব্যবসায়ী এই ভাই আরো জানালো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তাদের কাস্টমারদের সাথে অসহযোগিতার কথা। অন্যান্য এয়ারলাইন্স যেখানে তাদের কাস্টমারদের রিপোর্ট পজিটিভ আসলে ফুল রিফান্ড দিচ্ছে সেখানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেটা দিচ্ছে না। এমনকি ১৫ জানুয়ারির পর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কাস্টমারদের ফ্রি টিকেট চেঞ্জ পলিসিও উঠিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা দেখলেই বুঝা যায় বাংলাদেশে মহামারিকালীন কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। মানলাম, বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রবাসীদের জন্য কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। তাই বলে এমন অন্যায়! এই মহামারিতে যুক্তরাজ্য থেকে যাঁরাই দেশে যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ছাড়া অধিকাংশই দেশে না গেলে না হয় এমন বিশেষ প্রয়োজনেই বাংলাদেশে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে গিয়ে নেগেটিভ-পজিটিভের খেলা, টেস্টের ফি, হোটেলের লম্বা ভাড়া এবং খাবার কিনে গলা কাটা বিল পরিশোধ করে প্রবাসীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে সিলেট এলাকার নেতারা যুক্তরাজ্য সফরে আসলে উনাদের খেদমত করতে ইউকের প্রবাসীরা কোন কমতি করেন না। অসহায় প্রবাসীদের কোয়ারান্টাইনে রেখে যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে এগুলো কি সিলেটের নেতা, জনপ্রতিনিধিরা চোখে দেখেন না! ভোট আসলে কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে প্রবাসীদের কাছে অনেকেই তো ধরনা দেন। প্রবাসীদের এই ভোগান্তির সময় উনাদের উচিত নয় কি বিপদে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো; একটু সজাগ হওয়া! করোণা জীবাণূ মহামারি আকার ধারণ করে সারা দুনিয়াকে যখন ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে, দুনিয়ার প্রায় সবক’টি দেশ তথা ইউরোপীয় দেশগুলোতে চলছে মৃত মানুষের মিছিল ঠিক এমনি অবস্থায় নিজ দেশের প্রবাসীদের সাথে এহেন আচরণ লজ্জ্বাজনক নয় কি? বিশ্বকবির ভাষা এক সময় মনে দাগ কাটতো, এখন দেখি কবি ঠিকই বলেছিলেন-“রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি…”! |