মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের প্রায় পাঁচ শতক জমি দখল করে সরকারি বরাদ্দে আওয়ামী লীগে নেতা ও ইউপি সদস্য নিজ বাড়ির লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিজেদের জমি উদ্ধারের জন্য উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের জয়চন্ডী গ্রামের বাসিন্দা রনজিত চৌধুরীর পরিবারের লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এদিকে খাস জমি না হলেও ওই রাস্তার উন্নয়নে দুই দফা সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জয়চন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঐ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং তৎকালীন পার্শ্ববর্তী রামপাশা গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মিয়া ১৯৯৪ সালের দিকে জয়চন্ডী গ্রামের রনজিত চৌধুরীর কাছ থেকে ১৬ শতক জমি কেনেন। ২০০৪ সালে তিনি (লোকমান) কেনা জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে বসতি শুরু করেন। ২০০৭ সালে রনজিত মারা যাওয়ার পর ২০১০ সালে মিয়া সামনের কুলাউড়া-জুড়ী প্রধান সড়ক থেকে সরাসরি বাড়িতে যাওয়ার জন্য রনজিতের কুলাউড়া মৌজার অন্তর্ভুক্ত জেএল নম্বর-৫৬-এর ২০৬, ২০৭, ২১০ ও ২১২ নম্বর দাগের প্রায় ৫ শতক জমি দখল করে কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণের কাজ করেন। এ সময় রনজিতের পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলেও তিনি তাঁদের কথা শুনেন নি। এ ব্যাপারে রনজিতের বড় ছেলে রজত ওই বছরের ৫ এপ্রিল তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
রাস্তাটি সরকারি নয় এরপরও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ‘লোকমান মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে দক্ষিণ দিক থেকে মনোরঞ্জন দাশের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় সলিংয়ের কাজ’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ওই রাস্তার উন্নয়নে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
লোকমান মিয়া জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেখানে রাস্তা হয়েছে সে জায়গায় আগে জমির আইল ছিল। আশপাশের লোকজন আইল দিয়ে চলাচল করত। বাড়ি নির্মাণের পর তাঁর পরিবারসহ গ্রামের অন্য লোকজনের চলাচলের জন্য তিনি আইলটি একটু বড় করার জন্য রনজিত চৌধুরীকে প্রস্তাব দিলে রনজিত রাজি হয়ে যান। রনজিত মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলেরা বিষয়টি নিয়ে জটলা পাকান।
রাস্তার উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে লোকমান বলেন, ‘এমপি আবদুল মতিন সাহেব ঘনিষ্ঠ লোক। আগে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই তাঁর মাধ্যমেই প্রথমে রাস্তার কাজ করাই। এখন এই রাস্তা ইট সলিংয়ের জন্য জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ এনেছি। রাস্তা হওয়ায় আশপাশের জমির মালিকদের লাভ হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সাত-আটজন বাসিন্দা বলেন, রাস্তা করায় লোকমানের সুবিধাই হয়েছে বেশি। গ্রামের লোকজন আগে থেকেই পাশের পুষাইনগর মোকামের সামনের রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, এডিপির প্রকল্প তালিকা সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিরা দেন। সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এমপি আবদুল মতিনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ না করায় উনার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। [এইবেলা]