কুশিয়ারা নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে থাকায় নদী পাড়ের মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর উপজেলা ও হাকালুকি হাওর পাড়ের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে তবে ধীরগতিতে। গত বছর চৈত্র মাস থেকে শুরু হয় একঠানা ভারি বর্ষণ। ধারাবাহিক এই বর্ষন, চলতি বছরের শ্রাবনমাস মিলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পাঁচ মাস পুরো হল। লিখছেন মৌলভীবাজার থেকে আব্দুল ওয়াদুদ।
পাঁচ মাসের এই বন্যায় নদীপাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বকসিপুর, ছিক্কাগাঁও, কামালপুর, সুরিখাল, যুগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর, কান্দিগাঁও, জোড়াপুর, রামপুর, ফতেপুর ইউনিয়নের সাদাপুর, বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুর, আব্দুল্লাহপুর, ইসলামপুর ও সদর উপজেলার মনুমুখ ইউনিয়নের আরো ১৫/২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় নিম্নবিত্ত ও গরীব-দুস্থ সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরুপায় হয়ে গেছে। এসব নিম্নবিত্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি ক্ষেতের উপর নির্ভরশীল। একঠানা দুই মওসুমের ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা আরো অসহায় হয়ে পড়েছেন। কোথাও ত্রান সামগ্রী অথবা নগদ টাকা বিতরনের খবর শুনলে সবাই ছুটে যান কিছু পাবার আসায়। তখন বিতরনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয় পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী না থাকায় সকলকে একসাথে দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কষ্ট পাবেননা, পরবর্তীতে আসলে অবশিষ্টদেরও ত্রান সামগ্রী দেয়া হবে।
এই অবস্থায় যারা ত্রান পায় তাদের খুশি হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় আর যারা পায়নি, মলিন চেহারা নিয়ে স্থানত্যাগ করেন। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে পানিবন্দি বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার সাধারণ মানুষের একই হাল।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, কুশিয়ারায় পানি কমছে। শেরপুর সেকশনে বিপদসীমার ২ সেঃমিঃ ও শেওলা সেকশনে ২ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হাকালুকিতে জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, এই হাওরে আমাদের কোন প্রকল্প নাই তাই আমাদের এখানে কোন কর্মকান্ড নাই। হাওর খনন করলেও পানি অনেকটা নীচে নেমে আসবে। কুশিয়ারা নদী ড্রেজিং প্রকল্প চুড়ান্ত হয়েছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে অবহিত করেন।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম এর সাথে শনিবার, ২২ জুলাই কথা হয় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বলেন, লাগাতার বন্যায় সারা জেলায় ৫০ হাজারের অধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে এখন মৌলভীবাজারে পানি কমছে। বন্যা কবলিত ক্ষতিগ্রস্থদের এখন আমরা টিন ও নগদ টাকা বিতরণ করবো। এর আগে আমরা ত্রানসামগ্রী ও টাকা দিয়েছি। কৃষকদের জন্য কোন বরাদ্ধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য সরকার এখনো কিছু পাঠায়নি, পাঠালে আমরা পৌঁছে দেবো।