হারুনূর রশীদ।।
কামরুজ্জামান আহমদ। মৌলভীবাজারের খেলার জগতের এক দিকপাল। প্রানপুরুষ বললে বেশী বলা হবেনা। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে কমরুমিয়া আর ছোটদের কাছে সবার প্রিয় কমরুভাইছাব।
ছাত্রজীবন থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি বেজায় ঝোঁক ছিল। শুধু শুধু দেখার ঝোঁক নয়, নিজে খেলতেনও। ইংরেজ আমলের একেবারে শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত মৌলভীবাজার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেছেন। সে সময় মৌলভীবাজার শহরে শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে দু’টি প্রধান ক্লাব বা সংগঠন ছিল। এই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও মৌলভীবাজার টাউন ক্লাব। বেশ পরে আর একটি হয়েছিল ‘ইটা স্পোর্টিং ক্লাব’। দেশের স্বাধীনতার পরে অপর একটি ক্লাবের সৃষ্টি হয়েছিল খুব সম্ভবতঃ নাম ছিল “ইলেভেন ব্রাদার্স” অথবা “ইলেভেন ষ্টার”। কামরুজ্জামান ইটা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও খেলেছেন। সরকারী স্কুল ও কাশীনাথ স্কুলের পাশাপাশি সে সময় বিভিন্ন গ্রামেরও ফুটবল দল থাকতো।
যৌবন যখন তার মধ্যগগনে তখন তিনি ছিলেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। ৬নং একাটুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান হিসেবেও অনেকটাই সফল চেয়ারম্যান ছিলেন। জীবনের শুরু থেকে শেষাবধি তিনি ছিলেন খেলাপাগল মানুষ। বলতে গেলে খেলা-ধূলা ছিল অনেকটা তার জীবনের ব্রতের মত। বিশেষ করে ফুটবল খেলা। জীবনের শেষের দিকে তিনি রেফারী হিসেবেও সময় দিয়েছেন শহরের খেলা-ধূলার প্রানসঞ্চারে।
তার সময়ে তিনি পারতেন অন্য বহুকিছুর একটিকে পছন্দ করতে। সম্ভবতঃ সেই পছন্দের তাগিদে তিনি কিছুকাল শিক্ষকতাও করেছেন। খুঁজে ফিরেছেন তার জীবনের মূলকর্মটিকে। ‘আফতাব আলী স্কুল’এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু হলে কি হবে, যিনি জীবনের কাজ নিয়ে এসেছেন খেলা-ধূলার মাধ্যমে মানুষকে সৃষ্টির সেবায় উদ্বুদ্ধ করে যেতে, তাকে অন্যকর্ম কি করে আকৃষ্ট করবে! চেয়ারম্যানের দায়ীত্ব, প্রধান শিক্ষকের কাজ কোনটাই তার মন ভরাতে পারেনি। অবশেষে জীবনের কর্মব্রত হিসেবে পছন্দ করে নেন খেলার জগৎকে। তিনি মৌলভীবাজার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার পছন্দের খেলার জগতের দায়ীত্ব নিয়ে মৌলভীবাজারের খেলার ভুবনে প্রানপ্রতিষ্ঠা করেন। তার সময়ে মৌলভীবাজারের খেলার জগৎ প্রানচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল। ভাটা যে পড়েনি তা’নয়। একসময় ভাটাও পড়েছিল। তখন তার বয়স হয়ে গিয়েছিল আর নতুনের আগমনে তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। এটাই বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ম।
অবসর জীবনেও তার পছন্দের ব্যবসা ছিল বই-খাতার ব্যবসা(লাইব্রেরী ব্যবসা), ঔষুধের ব্যবসা অর্থাৎ ফার্মেসী ব্যবসা এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠা। তিনি তার বাসা সংলগ্ন ভুমিতে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ‘আযাদাবাদ জাম-ই-মসজিদ’। তিনি ছিলেন এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়াল্লী।
শহরের সকলের সেই সুপরিচিত মুখ ক্রীড়া প্রেমী ফুটবলার ও রেফারী মোহাম্মদ কমরুজ্জামান গত বুধবার দিবাগত ভোর ১.৩০ ঘটিকায় সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল অন্যুন ৮৫ বছর। ছেলে-মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এ মর্ত্যের পৃথিবীতে।
আগামীকাল শুক্রবার বেলা ২ঘটিকার সময় শহরের হযরত শাহ মোস্তাফা(বোগদাদী)(রঃ) ঈদগাহ মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বেলা ৫.৩০মিনিটে তার গ্রামের বাড়ীর নিকটস্ত উত্তরমুলাইম, মল্লিকসরাই ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ পড়া হবে। গ্রামের বাড়ীতেই তাদের পৈত্রিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
সংবাদ সহায়তায়- মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আবু শাহীন টিটু ও মামুনুর রশীদ মহসিন।