মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। বৃটেনে আইনে অধ্যয়নরত এক জালিয়াত দলের নেতা যার বিরুদ্ধে ১৩মিলিয়ন পাউণ্ড জালিয়াতির মামলা চলছিল, পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচনে দাঁড়ানোর পায়তারা করছে। লণ্ডনের ভিক্টোরিয়া ডক এলাকার আবুল কালাম মোহাম্মদ রেজাউল করিম অপর দুইজনসহ জামিনে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যায়। এদের ৪জনের বিরুদ্ধে বৃটেনের ভিসা জাল ও ট্যাক্স জালিয়াতির মামলা চলছিল। গত ২৫শে নভেম্বর ‘ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম’ এবং ২৯শে নভেম্বর ২০১৮ “ইভিনিং ষ্ট্যাণ্ডার্ড”এর ‘ওয়েস্ট এণ্ড ফাইনেল এক্সট্রা’ এ খবর প্রকাশ করে।
একেএম বলে পরিচিত ৪২বছর বয়সী এই রেজাউল করিমকে তার অনুপস্থিতিতে লণ্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট গত শুক্রবার সাড়ে ১০ বছরের সাজা দিয়েছে। দীর্ঘ ৩৫সপ্তাহ ব্যাপী শুনানীতে তাদেরকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে আদালত সাজার এ রায় দেয়।
বৃটিশ ভিসা জালিয়াতি ও বৃটিশ সরকারের ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে এ চার বাংলাদেশিকে সবমিলিয়ে ২০ বছর ৮মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বৃটিশ আদালত। দণ্ডিতদের মধ্যে একজন যুক্তরাজ্য বিএনপির সদস্য ও বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন এবং অন্য তিনজনও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর বলে ‘ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম’ লিখেছে। আরো জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত চার জনই লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপিকর্মীদের হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা মামলারও আসামী ছিলেন।
জানা গেছে, জালিয়াত চক্রের মূল হোতা রেজাউল করীম বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার এ.কে.এম. রেজাউল করীম নামে পরিচিত। জালিয়াতির টাকায় নিজ নামে স্কুল কলেজ সহ বেশকিছু সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তিনি জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। বিএনপির প্রচার সেলের অন্যতম ভূমিকা পালনকারী রেজাউল করিম কূটনীতিকদের নামে জাল চিঠি ইস্যুকারী বিএনপি নেতা সাদির সহযোগী এবং তারেক রহমানকে নিয়ে বই প্রকাশের উদ্যোক্তা।
মামলা চলাকালে দোষ স্বীকার করায় রেজাউল করিমকে সাড়ে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। অন্য দণ্ডিতরা হলেন রেজাউলের ভগ্নিপতি এনামুল করিম(৩৪), কাজি বরকত উল্লাহ(৩৯), মোহাম্মদ তমিজ উদ্দীন(৪৭)। এদের মধ্যে রেজাউল, এনামুল ও বরকত রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তারা বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
আদালতের রায় থেকে জানা যায়, এ চক্রটি ৭৯টি ভুয়া কোম্পানি খুলে বহু বাংলাদেশির জাল কাগজপত্র তৈরী করেছিল। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ভিসার আবেদনে জালিয়াতির দায়ে এ পাঁচজনকে ভিন্ন ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
রাজকীয় আবগারী ও শুল্ক বিভাগের তদন্তকারী কর্মকর্তা আলিসন চিপার্টন ‘ষ্ট্যাণ্ডার্ড’কে বলেন, রেজাউল করিম হলো জালিয়াত চক্রের প্রধান।
বিচারক মার্টিন গ্রিনফিথের নামোল্লেখ করে ইবার্তা লিখেছে যে, প্রতারকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরকে বোকা বানিয়ে ভিসা ইস্যু করানো এবং এক্ষেত্রে তারা সফল। তাদের জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮জন ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের ভিসা পেয়েছেন। তারা এখন ব্রিটেনে নাগরিকত্বের জন্য কাগুজে সক্ষমতা পেয়েছেন। দুজন পেয়েছেন ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ।
আদালতের প্রসিকিউটার জুলিয়ান ক্রিস্টোফার বলেন, এ জালিয়াত চক্রের জালিয়াতি ব্রিটেনে সমসাময়িক সব জালিয়াতিকে হার মানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চক্রান্ত করে এ রায় দেয়া হয়েছে।