মৌলভীবাজারের শিমুলিয়া গ্রামের আলোচিত ভাংচুর ও লুটপাট মামলার তদন্তের দায়ীত্ব নিয়েছে সিআইডি
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা।। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের সেই আলোচিত ভাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট মামলাটির তদন্তে নেমেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট(সিআইডি)। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিআইডির তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এলাকাবাসী ও মামলার সূত্রে জানা যায়, একটি হত্যা মামলার রেশ ধরে বাদীপক্ষের লোকজন পুরুষ শূন্য হয়ে যাওয়ায় হত্যাকান্ডের প্রায় ৫৬ দিন পরে সু-পরিকল্পিতভাবে ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর বাড়ীতে আক্রমন চালানো হয়। মামলার নালিশ থেকে জানা যায়, একজন ইউপি সদস্য মোসাহিদ মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক লোকজন দিনব্যাপী জনি মিয়া, আবুবক্কর মিয়া, খাজা মিয়া, আমির আলী, রুপেদা বেগম, মৌলুদা বেগম, লুৎফা বেগম, নান্টু মিয়া প্রমুখদের বাড়ী ঘর এবং আসবাব পত্র ভাংচুর করে। ওই সময় হামলাকারীরা বাড়ি ভাংচুর, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, চাউল, ফ্রিজ, কম্বল, ফিসারীর মাছ, নৌকা, মাছ ধরার জাল, ঘোলার ধান ও জমির ফসল কেটে প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সেলোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ৬১ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণের জন্য ৩৬জন আসামীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে বিগত ১৮ সালের ১০ই জানুয়ারি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট দ্রুত বিচার আদালতে পিটিশন মামলা নং ০১/১৮ দায়ের করেন। আদালত মামলার সত্যতা সাপেক্ষে মৌলভীবাজার মডেল থানাকে এফআইআর এর নির্দেশ দিলে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি দ্রুত বিচারের ধারায় এফ আই আর না করে নিয়মিত আইনে রুজু করার নির্দেশ প্রদানের জন্য ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে আদালতে প্রতিবেদন প্রদান করিলে বাদী পক্ষ পুলিশি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী প্রদান করেন।
আদালত বাদীপক্ষের নারাজী গ্রহণ করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন(পিবিআই)-মৌলভীবাজার জেলা বরাবর তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
পিবিআই তদন্ত করে মামলার বাদীর আরজি বর্ণিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬১ লাখ টাকা ও ৩৬জন আসামীর মধ্য আনকার মিয়া, দরবেশ মিয়া, রুপা মিয়া, শামীম মিয়া, মাসুক মিয়া, আনিছ মিয়া, ওয়াছাদ মিয়া সহ মোট জন ০৭জন আসামীর নাম উল্লেখ করে এবং ১৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে মর্মে এই বছরের ২৭ মার্চ তারিখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। বাদী পক্ষ পুলিশ পিবিআই মৌলভীবাজার কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী প্রদান করিলে আদালত বাদীর জবান বন্দী পর্যালোচনার পর মামলার তদন্ত ভার সিআইডিতে প্রেরণ করেন। দীর্ঘদিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিআইডি’র তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে এসে মামলার তদন্তের কার্যক্রম শুরু করে এবং সঠিক তদন্তের স্বার্থে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে।
এবিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী বিল্লাল হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন পর মামলাটির তদন্ত ভার যেহেতেু আদালত সিআইডি বরাবর প্রেরণ করেছেন, আমি আশা করছি বাদীপক্ষের মামলার সঠিক রহস্য উদঘাটন হবে।” মামলার বাদী সেলোয়ারা বেগমও আশা রাখেন যে, তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র এসআই নওশাদ হোসেন শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জানান, গেল কিছুদিন হয়েছে মামলার তদন্তভার পেয়েছি। সরেজমিনে একাধিকবার গিয়েছি। তদন্তাধীন বিষয় ও স্বাক্ষ্য প্রমান সংগ্রহের চেষ্ঠা চলছে। কিছুদিন পরে প্রতিবেদন জমা দিলেই জানতে পারবেন।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে কাগাবলা ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামে একজন নিহত হন। এঘটনায় ঘটনায় বাদী পক্ষের পুরুষদের হত্যা মামলার আসামী করা হলে পুরুষশন্য হয়ে পড়ে বাদীপক্ষের বাড়ীর লোকজন। এই সুযোগে আসামী পক্ষের লোকজন ইউ.পি সদস্যর নেতৃত্বে দুই দফায় বাদীপক্ষের ৫টি বাড়ীর প্রায় ১৫/২০ টি ঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট সংঘটিত করে। এটি মৌলভীবাজার জেলায় আলোচিত ঘটনায় রূপ নেয়।
________________________________________________________________________________________________________
প্রাচীন ভেনিস |