মৌলভীবাজার-সমসেরনগর বিমান বন্দর-বালাগঞ্জ সড়কের দুঃখ কথা
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা।। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা চায়ের রাজধানীখ্যাত ও দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি অধ্যুষিত অঞ্চল মৌলভীবাজার। কোন পর্যটক জেলা শহর থেকে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে শমসেরনগর বিমানঘাটির এই সড়কটি আগেই বেচেঁ নেন। কমলগঞ্জ উপজেলা জুড়ে অবস্থিত শমসেরনগরে রয়েছে সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি “শমসেরনগর এয়ারপোর্ট”, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চাতলাপুর বর্ডার, হামহাম জলপ্রপাত, আন্তর্জাতিক মানের বিএএফ শাহীন কলেজসহ পর্যটকাকৃষ্ট করণের আরো কত কি। এছাড়াও জেলা শহর থেকে কাউয়াদীঘি হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কটি সংস্কার না হওয়াতে দুই জেলার মানুষের দূর্ভোগের যেন অন্ত নেই।
বিগত কয়েক বছর যাবৎ মৌলভীবাজার-শমসেরনগর বিমানঘাটি-চাতলাপুর সীমান্ত সড়কটি সংস্কার না হওয়াতে চাতলাপুর সীমান্ত শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। এ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত কোটি কোটি টাকার মালামাল আনা-নেয়াসহ প্রতিনিয়ত দু’দেশের শত শত পর্যটকেরা আসা-যাওয়া করেন।
সব মিলিয়ে সাড়ে ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জন-গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের এ সড়কটির প্রায়-২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খানাখন্দ বেড়ে গর্তের সৃষ্টিসহ ইট-সুরকি বের হয়ে জলাশয়ের মত দেখাচ্ছে এখন।মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে সহজ পন্থায় এ পথ দিয়ে সর্বত্র যাওয়ার সুযোগ থাকলেও দেশী-বিদেশী পর্যটক ও কমলগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রায়ই আটকা পড়েন। যাত্রা পথে অটো রিক্সা ও মাইক্রো নিয়ে পথ চললেও অনেক গাড়ি চলতে পারে না খানা-খন্দের কারণে। ওই রুটে যেসব গাড়ি চলাচল করে অল্প দিনের ব্যবধানে ওইগুলোর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া এ পথে বাস চলাচল সেই কবে থেকেই বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় গেল ঈদে আগত পর্যটকেরা ক্ষোভ ঝেড়েছেন এ পথে এসে। সিলেটের বালাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে পড়ুয়া ছাত্র রাশেদ আল মারুফ, এক সাংবাদিক
পত্নী মার্জিয়া সুলতানা সুমি জানান, অনেক আশা নিয়ে “শমসেরনগর এয়ারপোর্ট”, আনারস বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দেখবো বলে বের হয়েছিলাম। রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে মন-মেজাজ নষ্ট হয়ে ঘুরে দেখার সেই ভাসনা মাটি হয়ে গেল। বাজে রাস্তায় “লং জার্নি” খেয়ে এখন আর ঘুরতে ইচ্ছে করছে না। মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ে সদ্য যোগদানকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, এখানকার রাস্থা-ঘাট সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নেই। খবর নিয়ে পড়ে জানাতে পারবো। তবে, ইসমাইল হোসেন মাসুক নামে ওই অফিসের আরেক কর্মকর্তা জানান, এ সড়কে সাড়ে ৩৩ কিলোমিটার যায়গায় ৪২ কোটি টাকার “ওয়ার্ক অর্ডার” হয়েছে। ওই কাজটি একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, তবে পুরো ৩৩ কিলোমিটার কাজ হবে না। একেবারে খারাপ যায়গা দেখে দেখে সংস্কার করা হবে।
এদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ হাওর “কাউয়াদীঘি” বেষ্টিত মৌলভীবাজারের রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের ফের বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। গেল ক’বছর পূর্বে দুই উপজেলার প্রায় ৩লাখ মানুষের যাতায়াতের এ পুরো সড়কটির প্রায় ১৭ কিলোমিটার যায়গা সংস্কার করা হয়। কিন্তু এ সংস্কারে সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় অল্প দিনের ব্যবধানে সরকারের প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকশান হয়েছে। হাওর বেষ্টিত নিম্নাঞ্চলে মাটি ভরাট না করে সড়ক পাঁকা করায় বর্ষা এলেই যেন জলে হাবুডুবু খায় এ সড়কটি। আর এ কারণেই বর্ষা মৌসুমে উপজেলার মোকামবাজার, ভুরভুরি পুল এলাকা, মেদেনীমহলসহ আরো পার্শ্ববর্তী এলাকা, অনেক স্থান জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এখানকার স্থানীয় জনসাধারণ ও জন-প্রতিনিধিরা এলজিইডির আওতায় থাকা এ সড়কটি নিয়ে বলেছেন, “আগে মাটি ভরাট ও পরে সড়কটি যদি সংস্কার করা হয় তবেই লক্ষাধিক মানুষের দুর্দশা লাঘব হবে”।
|