মৌলভীবাজার অফিস।। বড়লেখায় চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র আব্দুলাহ হাসান’এর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআই কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্যেখ করেন, হত্যাকান্ডের প্রায় তিনমাস পূর্বে স্কুল ছাত্র আব্দুলাহ হাসানের বাবার ব্যক্তিগত গাড়ি চালক ছিল এরশাদ মিয়া। স্কুল থেকে বাড়ি ফের পথে দোকান থেকে খাওয়ার কেক ক্রয়করে ফেরার সময় কিশোর হাসানের শরীরে গাড়ি লাগিয়ে দেয় এরশাদ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। পরে হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছিল। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর জরুরী কথা আছে বলে হাসানকে নির্জন পাহাড়ী টিলায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এরশাদ। মামলার এজহার সূত্রেজানা গেছে, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলা এলাকায় খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার খবর পেয়ে বড়লেখা মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিম বাড়িতে আসেন। ৩০ জানুয়ারি নিহতের বাবা ৬ জনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন।
হত্যাকান্ডটি চাঞ্চল্যকর ও রহস্যজনক হওয়ায় পিবিআই হেডকোয়াটার্স এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার নির্দেশে ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটি পিবিআই মৌলভীবাজারের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম তদন্তভার গ্রহন করেন। পিবিআইর তদন্তে এজহারভুক্ত ৬জন আসামীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না পাওয়ায় গাড়ী চালক এরশাদ মিয়াকে আটক করা হয়। গাড়ি চালক ভোলা জেলার শশীভূষণ উপজেলার চরমায়া গ্রামের মোঃ কবির শিকদার এর পুত্র।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসানের বাবার ব্যাক্তিগত গাড়ী চালক এরশাদ আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আব্দুল্লাহ হাসান সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন মনীর আহমদ একাডেমিতে ৮ম শ্রেনীতে পড়াশুনা করত।
হত্যাকারী চালক এরশাদ তাকে ওই স্কুল থেকে তাকে নিয়ে আসতো। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বড়লেখা হতে ভিকটিম আব্দুল্লাহ হাসানকে মনির আহমদ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার পথে গোলাপগঞ্জ থানাধীন চন্দরপুর পেট্রোল পাম্পের নিকট দোকান থেকে কেক ও ঠান্ডা কেনার জন্য গাড়ী থামায়। গাড়িতে উঠার এ পর্যায়ে কিশোর হাসানের শরীরে ধাক্কা লাগিয়ে দেয় এরশাদ। এ সময় হাসান এরশাদকে চড় মারে ও গালিগালাজ করে। এতে এরশাদের মনে ক্ষোভ জন্মে। এ থেকেই সে ঘটনাটি ঘটিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে। এরশাদ ঠান্ডা মাথায় পূর্ব পরিকল্পনা করে এ লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটালেও দীর্ঘদিন ছিল ধরাছোয়ার বাহিরে। গত ১৯ মে শনিবার থাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরশাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেলে ৩ দিনের মধ্যে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়।’
পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, তার কয়েকটি কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত করি। এর মধ্যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করে। ঘটনার রাতে গাড়ি চালক এরশাদ সচরাচর যেখানে ঘুমায় সেখানে না ঘুমিয়ে অন্যস্থানে ঘুমিয়েছে। হত্যাকান্ডের কয়েকদিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেবার পর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে মূখে দাড়ি রাখে। এসব সন্দেহজনক কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
হত্যার পরিকল্পনা করে কিভাবে :
ঘটনার দিন গত ১৮/০১/২০১৮ ইং তারিখ আব্দুল্লাহ পাশের মোহাম্মদ নগর বাজারে ছিল। আগে থেকে ওৎ পেতে হত্যার পরিকল্পনা একে দাড়ালো দা সাথে নিয়ে আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করতে থাকে এরশাদ। রাত হলে আব্দুল্লাহর সহপাঠি জাবের, তারেক, জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে বিদায় নেয় সে। পরে বাড়ি যেতে বাজারের ত্রি-মূখী রাস্থা হয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় আব্দুল্লাহ। তাৎক্ষনিক এসে হাজির হয়ে এরশাদ বলে চলো একটু ঘুরে আসি। হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে তারা আরব আলীর একটি টিলায় উঠে বসে বিভিন্ন আলাপচারিতা করে। কথার এক পর্যায়ে এরশাদ বলে ভাতিজা, তোমার কি মনে আছে সিলেটে যাওয়ার সময় সেদিন তুমি আমাকে চড় থাপ্পড় মেরেছিলে? আব্দুল্লাহ জানায়, চাচা তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। সে
ভয়ে পালানোর চেষ্টা করলে এরশাদ সাথে থাকা দাড়ালো দা বের করে পিছন দিক থেকে তার হাতে, মাথায় ও ঘাড়ের দুই পাশে এলোপাতুড়ী কয়েকটি কুপ দেয়। এতেই সে টিলা থেকে ছিটকে লতা-পাতার উপর পড়ে মারা যায়।