আবদুল আহাদ।। পুরোটাই প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভরশীল হাওর তীরের মানুষ। এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের মানুষের নির্ভরশীলতার প্রধান উপাদান হচ্ছে বোরো ধান ও মাছ। যে ধান থেকে তারা নিজের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে থাকেন। এক মৌসুম ধান না হলে হাহাকার শুরু হয়ে যায়, সেই ধান রক্ষায় সরকারীভাবে নেই কোন উদ্যোগ। তাদেরকে অতিমাত্রায় বোরো ধানের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন হাওরে কর্মরত পরিবেশ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা।
২০১২ সালে সরকার হাওর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি স্থান পায়নি সেই উন্নয়ন প্রকল্পে। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এই ৫টি উপজেলা নিয়ে অবস্থান হাকালুকি হাওরের। ২ লক্ষাধিক মানুষের জীবন জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওরের উপর নির্ভরশীল।
হাকালুকি হাওরের প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর বোরো ধান চাষ হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জগলুল হায়দার জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর। কৃষি বিভাগের দাবি তন্মধ্যে ৪ হাজার হেক্টর হাওর এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্থ সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরের বোরো ধানের হিসেবে হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৭৫ টন চাল উৎপাদন হয়। চালের সরকারি ক্রয়মূল্য অনুসারে ৩৫ টাকা কেজি অনুপাত হিসেবে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরে শুধু বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫৯ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
প্রতিবছর বোরো মৌসুমে হাওরকে কেন্দ্র করে কৃষি বিভাগের একটা বড় লক্ষ্যমাত্রা থাকে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। পাহাড়ের পাদদেশে হাওরের অবস্থান হওয়ায় পাহাড়ী ঢলে প্রথমেই হাকালুকি হাওরের বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানি মনির জানান, ২০১১ সালে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়েছিলো। সেসময় হাকালুকি হাওরের সাথে কুশিয়ারা নদীর সংযোগস্থলে বুড়িকিয়ারী নামক বাঁধ দেয়া হয়। বিকল্প সংযোগ খাল খনন করে কুশিয়ারা সাথে হাওরের সংযোগ দেয়া হয়। সেই বিকল্প খালের উভয়পাড়ে ৩টি ব্রিকফিল্ড থাকায় ইট ফেলে সেই খালটিও ভরাট করা হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় হাওরের বোরো ধান।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে হাকালুকি হাওর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পরিকল্পিতভাবে হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভূক্ত করে হাকালুকিকে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। হাওরের সাথে ৩শ পাহাড়ী নদীনালা মিশেছে। সেগুলোকে খনন করে পানি প্রবাহকে স্বাভাবিক করে দিতে হবে। নতুবা বোরো ধান রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
হাকালুকি হাওরে পরিবেশ অধিদফতরের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক পরামর্শক বশির আহমদ জানান, হাওর তীরে যেহেতু আগাম বন্যায় বোরো ধান শতভাগ ক্ষতি হচ্ছে, সেহেতু মানুষকে বোরো’র উপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প শষ্যের প্রতি মনযোগি হতে হবে। যেমন গম বা শীতকালীন শাকসবজি। তাহলে বোরো ধান তলিয়ে গেলেও কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।