আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজারের রাজনগরে জ্বর-সর্দি নিয়ে মারা যাওয়া সানচু মিয়া(৪৫) করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল উপজেলার আকুয়া গ্রামে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ‘রেপিড রেসপন্স টিমে’র সদস্যরা মৃতের শরীর ও তার স্ত্রীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ঢাকা আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়। গত ৫ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যার পর মৃত সানচু মিয়ার রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. তওহীদ আহমদ। এ ঘটনায় রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক ডাক্তার ও এক ওয়ার্ড বয়কে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের সানচু মিয়া(৪৫) জ্বর-সর্দি নিয়ে গত ৪ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ওই মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে ‘রেপিড রেসপন্স টিম’ মৃতের শরীর ও তার স্ত্রীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে ঢাকা আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়। গত ৫ এপ্রিল রোববার সন্ধ্যার পর আইইডিসিআর থেকে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জনকে জানানো হয়, মৃত সানচু মিয়ার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। সাথে সাথে রাজনগর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন আকুয়া গ্রামের ১৬৩টি পরিবার ও আশেপাশের ৫টি গ্রামকে লকডাউন করে। গ্রামগুলো হলো আকুয়া, ভাঙ্গারহাট, সৈয়দনগর, ডলা ও গনেশপুর। উল্লেখ্য যে, মৃত ওই ব্যক্তি বিদেশ ফেরত নন। তিনি স্থানীয় টেংরাবাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। হঠাৎ তিনি সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ায় এক ডাক্তারকে এবং রোগীর বিছানাপত্র পরিবর্তন করায় এক ওয়ার্ড বয়কে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালি দাস।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসিম বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে আমরা ওই এলাকাসহ আশেপাশের ৫টি গ্রাম লকডাউন করেছি। এছাড়া আগে থেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই এলাকার ১৬৩ পরিবারকেও লকডাউন করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালি দাস বলেন, হাসপাতালের একজন ডাক্তার ও একজন ওয়ার্ডবয়কে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। তারা রোগীর সংস্পর্শে গিয়েছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ঊর্মি রায় বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তির মাঝে কিছু লক্ষণ ছিল। গত ৫ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ আসায় সাথে সাথে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার খবর মৌলভীবাজারসহ সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়লে রাজনগরের সাথে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খেয়াঘাটবাজার ও বালাগঞ্জবাজার দিয়ে ঘেঁষে যাওয়া কুশিয়ারা নদীতে সকল নৌকা চলাচল বন্ধ রেখেছে বালাগঞ্জ প্রশাসন। এতে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন নদীর উভয় পাড়ে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. তওহীদ আহমদ সোমবার জানান, মৃত সানচু মিয়ার জ্বর-সর্দি ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়। গত ৫ এপ্রিল রাতে মৃত সানচু মিয়ার রিপোর্ট পজিটিভ বলে ঢাকা থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ফোনে আমাকে জানান। সাথে সাথে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলি। এছাড়াও এক প্রশ্নরে জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ওই এলাকায় যারা সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তাদের শ্বাসনালীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সোমবারও আমরা ওই এলাকার ১০/১২জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি।