আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইবার পূর্বেই চিন্তা করি প্রতিষ্ঠানটি কতটুক খ্যাতি অর্জন করেছে, এখানে যারা পড়েছে তারা কতদূর এগিয়ে গেছে। একটা প্রতিষ্ঠান কী একজন শিক্ষার্থীর ভবিৎষত তৈরী করতে পারে? ভালো নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হলে, শিক্ষার্থীর লক্ষ্য পরিশ্রম কী কোনো কাজে আসে না? ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে জীবন কী থেমে থাকে।
আমরা সকলেই বুয়েট, ঢাবি, জাবি, চাবি ইত্যাদিকে বেশি প্রাধান্য দেই। হ্যা এইটা ঠিক এইখানে পড়ার পরিবেশ ভালো বা পড়া ভালো হয়। তাই এসবে চান্স না পেলে অনেকই হতাশ হয়ে পড়েন। ভাবেন জীবনটাই বৃথা গেলো। কিন্তু পরিশ্রম করে সেখানে জায়গা পেলে না বলে যে জীবনের লক্ষ্য ও সাফল্য থেমে থাকবে তাতো নয়। সেখানে চান্স না পাওয়াটা হতাশাজনক সেটা ভালো করেই জানা আছে। কিন্তু সেটাও মাথায় রাখা উচিত আমাদের লক্ষ্য ঠিক থাকলে সফলতা আসবেই। হয়তো পরিশ্রম দ্বিগুন করতে হবে, এতোটুকুই।
এইতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া নাফিউল আদনান চৌধুরী এখন গুগলের প্রকৌশলী। কঠোর প্ররিশ্রমের কারণে সে আজ সফলতা পেয়েছে। আদনান বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলে চাকরি পেয়েছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থী গুগলের আয়ারল্যান্ড(ডাবলিন) অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার(সাইট রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার) হিসেবে কাজ করবেন। গুগলে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি আদনান নিজেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়েছেন।
তাছাড়া কুয়েটের টিম “মহাকাশ” নাসায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে শীর্ষে আছে। এছাড়া ঢাবি অধিভুক্ত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রকেট উৎক্ষেপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, শুধু সরকারের অনুমতির প্রয়োজন।
একটি বিষয় আমাদের সকলের মাথায় রাখতে হবে। আর তা’হলো আমাদের মেধা পাচারের বিষয়টি। গুগলে চাকরী পাওয়ায় আমরা যেমন মহানন্দে ভাসছি তেমনি আমাদের সমাজের আয়নাগুলো অর্থাৎ আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোও ছোট বড় খবর তৈরী করে আমাদের উৎসাহিত করছেন প্রবাস বা বিদেশী ব্যবসাসংস্থাগুলোতে চাকরী নিতে। এখানে আমাদের সমাজ ও সরকারের দায়ীত্ব রয়েছে অপরিসীম। আমরা কেবল ডিজিটেল বাংলাদেশ বলেই ঢোল বাজাচ্ছি। অথচ আমাদের মেধাবি নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বড় বেতনে চাকরী দেয়ার নামে বলতে গেলে শূণ্যের কোঠায় আছি। এ সুযোগেই আমাদের মেধাবীরা দেশ ছাড়া হচ্ছে দিন দিন। আর বিদেশী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এর সুযোগ নিয়ে আমাদের মেধাবীদের কিনে নিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। যা নতুন কিছু নয় তাদের অতি পুরাতন কৃৎকৌশল। যা দেশের জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়। এমন অবস্থা ডিজিটেল বাংলাদেশ কথার অবমাননা বলেই মনে করি। বড় বড় বহুজাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে চাকুরী নেয়া প্রসংশনীয় কিন্তু চাকরী নিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী বসবাসের চিন্তা আমাদের চিন্তায় নিন্দনীয় বলেই মনে করি। এমন চাকরী নেয়া যে আমাদের মহামূল্যবান মেধা পাচারের অপসংস্কৃতিকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে চলেছে তা নিশ্চয়ই ভুল কথা নয়। এ বিষয়ে আমাদের নিন্দ্রাভঙ্গ প্রয়োজন।