1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
১৯৭১ এর এই দিনে ৫ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন

১৯৭১ এর এই দিনে ৫ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৫৫৯ পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা মুক্ত দিবস ৫ ডিসেম্বর রোববার। স্বাধীনতার উষালগ্নে ১৯৭১ সালের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়েছিলো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সাড়াঁশি অভিযানের মুখে বিপর্যস্ত হয়ে কমলগঞ্জের দখলদারিত্ব ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী। এই দিনে কমলগঞ্জের মুক্তিপাগল বাঙ্গালি উড়িয়ে দেয় স্বাধীনতার পতাকা। দিবসটি পালন উপলক্ষে আজ রোববার কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জয়নাল আাবেদীন জানান, প্রকৃতপক্ষে ৫ ডিসেম্বরই কমলগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমলগঞ্জে সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই এখানে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুগত ৬০ জনের একটি দল তৈরী করে উপজেলার শমশেরনগর বিমান ঘাটিতে ট্রেনিং এর কাজ চলতে থাকে। ১০ মার্চ ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলের নেতৃত্বে এক দল পাক সেনা মৌলভীবাজারে অবস্থান নেয়। ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে তৎকালিন ছাত্রনেতা নারায়ন পাল ও আব্দুর রহিম পাকিস্তানী পতাকা পুড়ানোর দায়ে গ্রেফতার হন। পরে অবশ্য জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা ছিল বামপন্থিদের সুদৃঢ় ঘাঁটি। তারা মৌলানা ভাসানি ও হক তোহায়া গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সুচনা লগ্নে নকশাল পন্থিদের নির্মূল করার অজুহাতে মেজর খালেদ মোশারফকে কমলগঞ্জে পাঠানো হয়। তিনি ছিলেন বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা। ২৫শে মার্চ গণহত্যা শুরু হলে তিনি পাক বাহিনীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে জনতার কাতারে সামিল হন।

ঢাকায় গণহত্যার প্রতিবাদে ২৬শে মার্চ কমলগঞ্জে সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল বের হয়। পাক সেনারা সেই মিছিলের উপর গুলি চালালে সিরাজুল ইসলাম নামে একজন বৃদ্ধ শহীদ হন। এ হত্যাকান্ডে উপজেলাবাসীর মনে জ্বলে উঠে প্রতিশোধের আগুন। স্থানীয় বাঙ্গালী ইপিআর ও পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরাও একাত্মতা ঘোষনা করে সংগ্রাম পরিষদের সাথে। ২৮শে মার্চ শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সমস্ত অস্ত্র উঠিয়ে আনা হয়। মালগাড়ির বগি দিয়ে ভানুগাছ-শমশেরনগর-মৌলভীবাজার রাস্তায় বেরিকেড দেওয়া হয়। ২৯শে মার্চ পাক বাহিনী খবর পেয়ে আবারও কমলগঞ্জে আসে। সন্ধ্যায় পাক সেনারা ভানুগাছ থেকে শমশেরনগরে এলে মুক্তিসেনাদের অতর্কিত আক্রমনে ক্যাপ্টেন গোলাম রসুল সহ ৯ জন পাক সেনা নিহত হয়। স্বাধীনতার উষালগ্নের এই প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে প্রচুর অস্ত্র গোলাবারুদসহ পাক সেনাদের ২টি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বপ্রথম এই সশস্ত্র যুদ্ধে বিজয় লাভের পরদিনই কমলগঞ্জে মুক্তি পাগল জনতার এক বিরাট সমাবেশে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা পরিষদ। এর পর থেকেই নিয়মিত চলতে থাকে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। ২৮ মার্চের পর পাক বাহিনী জল, স্থল ও আকাশ পথে কমলগঞ্জে সাঁড়াশি আক্রমন শুরু করে। মুক্তিবাহিনী তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের মোকাবিলায় অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৩টি ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে পাত্রখোলা, ধলাই ও ভানুগাছের যুদ্ধ। ন্যাপ নেতা মফিজ আলী, ক্যাপ্টেন মোজাফফর আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা এম, এ, গফুর, ময়না মিয়া, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান প্রমুখের সাহসী নেতৃত্বে কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসীকতার সাথে লড়েছেন। এখানকার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন বঙ্গবীর এম, এ, জি ওসমানী, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেডিয়ার আমিন আহম্মদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মত দেশ বরেণ্য ব্যক্তিরা। এ উপজেলার বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, লেন্সনায়েক জিল্লুর রহমান, সিপাহী মিজানুর রহমান, সিপাহী আব্দুর রশিদ, সিপাহী শাহাজাহান মিয়াসহ নাম না জানা অনেকেই।

একাধারে ৯ মাস ব্যাপী চলমান এই মুক্তিযুদ্ধে কমলগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তা এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ক্যাপ্টেন মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন গেরিলা অপারেশনের লোমহর্ষকর পর্যায়গুলো শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিভিন্ন বেতার মাধ্যম থেকে তার উপর মন্তব্যও করা হয়েছে বহু বার। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি শমশেরনগর মুক্ত হওয়ার সময়।

শমশেরনগর যুদ্ধের আরও এক অগ্রসেনানি ছিলেন সৈয়দ মতিউর রহমান। ৩ ডিসেম্বর শমশেরনগর মুক্ত হবার প্রাক্কালে তার অসম সাহসী যুদ্ধ পরিচালনা দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন শমশেরনগর ডাক বাংলোয় অবস্থানকারী তৎকালীন সময়ের মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন চাতওয়াল সিং। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর শমশেরনগর এলাকা শক্রমুক্ত করে ৫ ডিসেম্বরে ভানুগাছ এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধের পর কমলগঞ্জ সদর থেকে পাক হানাদাররা পিছু হটে মৌলভীবাজারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা কমলগঞ্জের মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে ৫ ডিসেম্বর গোটা কমলগঞ্জ উপজেলা কমলগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়।

 

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT