আব্দুল ওয়াদুদ।। চলতি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মৌলভীবাজারে পাসের হার ৬৬.৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে ৪২.২৭ শতাংশ ও মেয়ে ৫৭.৭২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬শত ৭২ জন।জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলে ৩৫৩ জন ও মেয়ে ৩১৯ জন। মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরিক্ষায় ২৪ হাজার ৪শত ৮২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। ছেলে ১০ হাজার ৩শত ৩৫ জন ও মেয়ে ১৪হাজার ৩শত ৪৭ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৬ হাজার ৪শত ১ জন। এদের মাঝে ছেলে ৬হাজার ৯ শত ৩৩ জন ও মেয়ে ৯ হাজার ৪ শত ৬৮ জন।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সেরা ১০টি স্কুলের মধ্যে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পেয়েছে ৬১ টি জিপিএ-৫, বিএফ শাহীন কলেজ, কমলগঞ্জ-৫৯, আর কে লাইসিয়াম উচ্চ বিদ্যালয়, বড়লেখা-৫৪, দি বার্ডস রেসিডেন্সসিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রীমঙ্গল-৫৪, আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সদর-৩৬, রাজনগর আইডিয়েল হাইস্কুল-৩০, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাই স্কুল, সদর-২৬, কমলগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়-১৭, শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-১৭, বি টি আর আই উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল-১৭, কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কমলগঞ্জ-১৫, বর্ডার গার্ড পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল-১৪ ও আসিদ উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল পেয়েছে ১২টি জিপিএ-৫।
আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতির আহমদ বলেন, এবার আমাদের স্কুলে ৩৬টি এ প্লাস এসেছে। এছাড়াও বিজ্ঞানে ৯টি ও মানবিকে ১টিসহ গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি মোট ১০টি। গত বছরে ২৩৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩১টি ‘এ’ প্লাস পায়। এ বছর পাশের হার ৯৩.০৭%। গত বছর ছিল ৯৬%। তিনি বলেন, এ ফলাফলে আমরা পুরোপুরি সাফল্য পাইনি। ভবিষ্যতে আমাদের আরো ভাল ফলাফলের পাশাপাশি শতভাগ পাশ করে এ প্লাস নিয়ে আসতে হবে। তবে, অভিভাবকরা যথেষ্ট সহযোগীতা করেছেন। তিনি বলেন, আগে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তার হবার চিন্তা করতো। এখন তারা ‘বার-এট-ল’ ডিগ্রী অর্জন, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারসহ বিসিএস ক্যাডার হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায়।
শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে আছে উল্যেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্মার্ট টিভির মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি জ্ঞান-বিজ্ঞানের কলা-কৌশল দেখিয়ে তাৎক্ষনিক ধারনা দিয়ে মেধাবৃদ্ধি করা হচ্ছে। ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ ও ‘এ প্লাস’এর মান নিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত বিষয়ের সাহায্য ছাড়া ৮০ বা তার উপরে সকল বিষয়ে যারা মার্ক তুলেছে ফলাফলে তাদের ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর যারা অতিরিক্ত বিষয়ের সাহায্য নিয়ে সবক’টি বিষয়ে ৮০ বা এর উপরে পেয়েছে তাদের রেজাল্ট হয় ‘এ প্লাস’।
আলাপচারিতা হয় আলী আমজদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মারিয়া জান্নাতী উর্মি-এর সাথে। সে সফল ফলাফলে শিক্ষক-অভিভাবকের ভূমিকার কথা স্বীকার করে জানায়, সে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে আইন পেশায় অথবা ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায়। এখানে সুযোগ না পেলে যে কোন ভাল একটা কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোন করবে সে। উর্মি জানায়, পরবর্তীতে আমি বিসিএস এ পড়াশেনা করে ম্যাজিস্ট্রেট হবো। সবশেষে যদি কিছু করতে না পারি তবে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার ইচ্ছা আছে। আমার এ ইচ্ছা ও চিন্তার রূপায়নে অবশ্যই সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। তাই আমি সকলের দোয়া প্রার্থী।
এদিকে ‘গোল্ডেন এ-প্লাস’এর কোন পরিসংখ্যান জেলা শিক্ষা অফিস দিতে পারেনি। তারা বলেছেন ‘গোল্ডেন এ-প্লাস’ বলতে কিছু নেই সব ‘এ-প্লাস’। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘গোল্ডেন এ-প্লাস’ বলতে কিছু নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চ ফলাফল হিসেব করে একটা ধারণা দেন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুস সামাদ জানান, ‘গোল্ডেন এ-প্লাস’ ‘অফিসিয়েলি’ কিছু নয় বরং সবগুলো ‘এ-প্লাস’ হয়। রাজনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মৌলুদুর রহমান জানান, সেটা (গোল্ডেন এ প্লাস) মুখে মুখে বানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, এবার জেলায় ৬৭২টি জিপিএ-৫ এসেছে। গতবছর ২০ হাজার ৭শ ৫৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করে ১৫ হাজার ৭শ ৯৪ জন। আর জিপিএ-৫ পায় ৫৯২টি। গতবারের চেয়ে এবার আমরা ভাল রেজাল্ট করেছি।