আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার।। মৌলভীবাজারের বর্তমান গীর্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালিয়ে বড়দিনের উৎসব পালন করলেন মৌলভীবাজারের খৃষ্টীয় ধর্মাবলম্বিরা। অনুষ্টানকে আলোকোজ্জ্বল ও উৎসাহব্যঞ্জক চমকপদ করতে প্রচুর জরি লাগিয়ে গীর্জার ভেতর ও বাইরের দেয়াল রঙিন করে সাজানো হয়।
মৌলভীবাজার প্রেসবিটারিয়ান চার্চের আয়োজনে যিশু খৃস্টের জন্মদিন উপলক্ষে রোববার রাতে কেক কেটে দিনটির শুভ উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসিন। এর আগে সাথী পাত্র ও সোনিয়া মান্নান এর যৌথ সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ সৈয়দা সায়রা মহসিন। এসময় তিনি বলেন, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন। ঘন কুয়াশার মধ্যে এই অনুষ্টানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যিশুর বানী যেন আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি।
সন্ত্রাস-দূর্নীতি রুখে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সবাই যেন মিলে মিশে একসাথে কাজ করতে পারি। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এজিএম আল মাসুদ, বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাকিলা রহমান প্রমূখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, শ্যামল ভৌমিক, জিআই দাশ সজল, সৈয়দা সায়লা শারমিন, পৌর কাউন্সিলর আসাদ হোসেন মক্কু, শামিম আহমদ চৌধুরী, শ্রীকান্ত ধর, পৌর সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন চৌধুরীসহ অনেকেই।
‘ক্রিসমাস’ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন এই ২৫শে ডিসেম্বর। বিশ্ববাঙ্গালীদের কাছে ‘বড়দিন’ বলেই এর পরিচিতি। খৃষ্ট ধর্মাবলম্বিদের মতে, এই পুণ্যদিনে খৃষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখৃষ্ট ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, যিশুখ্রিস্ট জন্ম নিয়েছিলেন সৃষ্টি কর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য। খৃস্ট ধর্মের অনুসারী “উৎস পেন্টিস” বড়দিনের ক্রিসমাস ট্রি’র ব্যাখ্যা দিয়ে দিনটির তাৎপর্য বুঝাতে গিয়ে বলেন, ক্রিসমাস ট্রি মানে “শীতের অন্ধকারে জীবনের আশার আলো”। বহুকাল আগে এই ক্রিসমাস ট্রি শুরু হয়েছিল ইউরোপের উত্তরাঞ্চল থেকে। সেই সময়ে সেখানে শীত উৎসব পালন করা হতো। ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন কুয়াশার মধ্যে এটি পালন করা হতো তখন। এটি আসলে একটি সংস্কৃতি। তৎকালীন সময়ে দিনের বেলা তেমন একটা সুরুজের দেখা পাওয়া যেতনা। আবার সূর্য তাড়াতাড়ি অস্ত যেত। গ্রীষ্মকালে সকালে বৃক্ষের পাতা শক্ত হয়ে উঠে। এসব পাতায় বরফ জমে থাকলেও পাতা ঝরে পড়তো না। এই অবস্থায় চারিদিক সাদা আর সাদা চুখে পড়তো। এই শ্বেতসুভ্রতার মাঝে সেখানে একমাত্র একটাই সবুজ গাছ ছিল। উৎসবের সময় অনুসারীরা এ গাছটাকে আনতো। সেই থেকেই এই ‘ক্রিসমাস ট্রি’ দিয়ে ঘটা করে এই উৎসব পালনের ঐতিহ্য তৈরী হয়েছে।
ওই দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে তিনি আরো বলেন, সেই সময়ে জার্মানীর প্রিন্স এলবার্টের সাথে কুইন ভিক্টোরিয়া’র বিয়ে হয়। তখন তিনি ক্রিসমাস পালন করেছেন ও পরিবারে লালন করেছেন। এছাড়াও ব্রিটেনের ব্যবসায়ীরা ব্যবসার কাজে বাহিরে গেলে এটি সঙ্গে নিয়ে যেত।
এদিকে সোমবার বড়দিন উপলক্ষে মৌলভীবাজার প্রেসবিটারিয়ান খৃস্টান মিশনে সকাল ১০টায় ধর্মীয় আলোচনা রাখেন খৃস্টান পাদ্রি রেবারেন বিবি পেন্টিস। এসময় খৃস্টধর্মের সকল অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন। খৃস্টান পাদ্রী রেভারেন বিবি পেন্টিস, যিশু সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, যোসেফ নামে এক ধর্মগুরুর সাথে মরিয়মের বাগদান হয়। বাগদানের পর থেকে তিনি ধর্ম নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একদিন সংবাদ আসে স্ত্রী মরিয়ম মা হতে চলেছেন। তখন তিনি ভাবলেন এটা কিভাবে সম্ভব? পরে ঈশ্বরের এক দূত এসে তাকে বলেন, শ্রষ্টার পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করে এটা করা হয়েছে। এ রূপেই যীশু জন্মের কাহিনী বিবৃত হয়েছে বাইবেলে। বাইবেল ব্যাখ্যা করে রেভারেন আরো বলেন, যিশু জন্মের পূর্বে আকাশে একটি ঝলমলে তারকা দেখা দিয়েছিল। তখন মানুষ বুঝতে পেরেছিল পৃথিবীতে এক মহামানবের আবির্ভাব ঘটতে চলেছে। জন্মের পর থেকেই তিনি পাপাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আজ তার কারণেই আমরা এই অনুষ্টান করতে পারছি।