লন্ডন:
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী নিরপরাধ গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার চালালে রাখাইন রাজ্যে আবারো অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার রোহিঙ্গা রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছে। ফলে গেল সোমবার, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক অভিযানের জন্য বাংলাদেশ, মায়ানমারকে প্রস্তাব দিয়েছে। ঢাকা থেকে এএফপি’র বরাত দিয়ে ‘আরব নিউজ’ এ খবর দিয়েছে।
আরব নিউজ লিখেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র রাখাইন বিদ্রুহীরা, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর চোরাগুপ্তা হামলা চালালে গত শুক্রবার থেকে দারিদ্রপীড়িত রাখাইনদের লড়াই নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে। এই চোরাগুপ্তা আক্রমনের বিরুদ্ধে মায়ানমার বাহিনী সশস্ত্র পদক্ষেপ নিলে ৮০জন সশস্ত্র বিদ্রোহীসহ শতাধিক লোক নিশ্চিতভাবে নিহত হয়। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিরীহ গ্রামবাসী পালিয়ে আসে বাংলাদেশে।
জাতিসংঘের শ্মরণার্থী তদারকি এজেন্সি গত সোমবার বলেছে, বিগত ৩দিনে ৩ হাজারেরও বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে কারণ ওখানে রাজ্যহীন মুসলিম সংখ্যালঘুরা লাঞ্চনা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাড়ী-ঘর ছেড়ে এসে জড়ো হয়েছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য। ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রহরা জোরদার করেছে এবং শত শত রোহিঙ্গাঅনুপ্রবেশকারীদের বাঁধা দিয়ে চলেছে। এদের কয়েক হাজার এখন জাতিসংঘ এলাকায় খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছে।
ঢাকায় মায়ানমারের চার্জ দ্য এফেয়ার্স এর সাথে এক বৈঠকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সীমান্তে যৌথ সামরিক অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপে নিষেধ আছে এমন একজন কর্তাব্যক্তি বলেন, “আমরা প্রস্তাব দিয়ে বলেছি যদি মায়ানমার চায় তবে যে কোন সশস্ত্র শক্তি বা আরাকানি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমরা উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে যৌথভাবে পাহাড়াদারি চালাবো।”
‘আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি’ সংক্ষেপে -এআরএসএ, একটি আরাকানি বিদ্রোহী গ্রুপ, যাদের দাবী তারা মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ রাখাইনদের নীতিহীন নির্যাতন থেকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মায়ানমারের কূটনীতিক কোন মন্তব্য করেননি।
গেল সপ্তাহের শেষে রাখাইন রাজ্যে অত্যাচার হিংস্রতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ মায়ানমারের চার্জ দ্য এফেয়ার্সকে তলব করে নতুন করে সীমান্তে শ্মরণার্থী আগমনের সমূহ সম্ভাবনার কথা এবং বাংলাদেশের উদ্বিগ্নতার কথা জানান। এমনিতেই উভয় দেশের সীমান্তে ৪শ হাজার রোহিঙ্গা শ্মরণার্থী নোংড়া তাবুতে জীবন কাটাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্বাস, মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক পদক্ষেপ সংখ্যালঘু নিধনের পর্যায়ে পড়ে যদিও মায়ানমারের অং সা সু কি’র সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চলতি মাসে প্রতিদিনের সংঘর্ষ না ঘটলেও সাধারণ মানুষের ভাষায় তারা সামরিক বাহিনীর তদন্তাভিযান আর এর বিপরীতে সশস্ত্রদের সন্দেহভাজন যেকোন ব্যক্তিকে হত্যার মাঝখানে পড়ে জীবনকে সন্দেহাতীত চরমভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। সূত্র: আরব নিউজ