করোনা আক্রান্ত রুগি ছাড়া আর কোন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাবে না। আজ বৃহস্পতিবার ৭মে ২০২০ থেকে এ নির্দেশের কার্যকারীতা শুরু হলো। এর কারণ হাসপাতালের বেশ কয়েকজন নার্সিং কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আশ্চর্যজনক এমনকি চমকপ্রদও বলা যায়, এমন ঘোষণাটি দেয়া হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে। হাসপাতালের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণায় ৬টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশনাগুলি হলো- ১-করোনা রোগী ব্যতীত অন্য কোন রোগী ভর্তি করা যাবে না। ২-বহিঃবিভাগ, অন্ত বিভাগ এবং অপারেশন বন্ধ থাকিবে। ৩-জরুরী সেবা প্রদানকারীগন থাকা খাওয়ার নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করে দায়ীত্ব পালন করিবেন। ৪-আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার খবরা খবর এর দায়ীত্ব দুইজন চিকিৎসক পালন করিবেন। ৫-পরপর ৩দিন হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য জীবাণু নাশক স্প্রে ছিটানো অব্যাহত থাকবে। ৬-উপরোক্ত সেবাগুলি বিশেষ ডিউটি রোস্টার দ্বারা চলিবে।
একই নির্দেশনায় হাসপাতালের যে যে সেবা সমূহ চালু থাকবে সেগুলো হলো- ১-জরুরী বিভাগ, ফিভার কর্ণার, করোনা আইসোলেসন, ডায়ালাইসিস সেবা চালু থাকবে। ২-ল্যাবরেটরী সেবা সীমিত আকারে চালু থাকবে। ৩-প্রশাসনিক কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু থাকবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে বহু কথাই বলা যায়। আমাদের দেশের সরকারী স্বাস্থ্যসেবা এমনিতেই খুবই সীমিত। দেশের ১৭কোটী মানুষের চিন্তায় এ সেবা এতোই সীমিত যে একমাত্র ভিন্ন কোন দেশে যাদের স্থায়ীভাবে কিছুদিন থাকার অভিজ্ঞতা আছে তারা কিছুটা উপলব্দি করতে পারবেন। এরপর ঔষধ প্রায় সবগুলোই রোগীকে বাহির থেকে খরিদ করতে হয়। এমনও হয় হাসপাতালের খাবার রোগী খেতে পারে না ফলে বাহির থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ শুধু হাসপাতাল কেনো সারা দেশজুড়ে। এই কিছুদিন আগে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালের কিছু ভিডিওচিত্র শহরেরই কতিপয় সাংবাদিকের ফেইচবুকে দেখে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম। একটি জেলা সদর হাসপাতালের অবস্থা এমন হতে পারে কি করে?
কেনো এমন হলো? এর খুঁজ নিতে গিয়ে পেয়ে গেলাম বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন, মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি ডা. শাব্বির হোসেন খান-এর ফেইচবুকের ভিডিও আলাপ।
করোনা ছাড়া কোন রুগী ভর্তি করবে না মৌলভীবাজার ২৫০শয্যা হাসপাতাল
ডা. শাব্বির তার ফেইচবুক ভিডিও-তে যা বলেছেন-
সারা দেশের আর কোথায়ও এমন সিদ্ধান্ত কোন হাসাপাতাল নিয়েছে বলে শুনিনি। ফলে মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, যাকে অনেকেই গর্বভরে “২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল” বলে থাকেন। সেই “নাই মামুর চেয়ে কাঁনা মামুও ভাল”এর মত জেলার সবেধন নীলমনি জেলা সদর হাসপাতাল করোনা ছাড়া কোন রোগী যদি ভর্তি না করেন তা’হলে বেচারা রোগীগন যাবে কোথায়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একবারও কি তেমন অবস্থার কথা বিবেচানায় নিয়ে সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন।
এদিকে ডা. শাব্বির তার ফেইচবুক বক্তব্যে যা বললেন তাতে যে কোন মানুষেরই চোখ চরকগাছ হয়ে উঠার জোগাড়। শাব্বিরের ভাষায়(তিনি যে দিন ফেইচবুকে তার ভিডিও বক্তব্য রেখেছেন) সারা দেশে ৫শত চিকিৎসা কর্মী করোনায় আক্রান্ত। কারণ হিসেবে তিনি স্পষ্টতঃই বলেছেন যে সরকারের কোন প্রস্তুতি ছিল না। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছিলেন সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে। ডা. শাব্বিরের অভিযোগ মৌলভীবাজার হাসপাতালে যেসব PPE (personal protection equipments) দেয়া হয়েছে সেগুলো এমনিতেই খুবই নিম্নমানের। তার উপর ধুয়ে পুনঃ পুনঃ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে নেই কোন মানসম্পন্ন ‘মাস্ক’ বা মুখোশ। নেই N95, FFP2, KN95। তার মতে ‘ফিভার কর্ণার’ রোগী ও চিকিৎসকের খুবই নাজুক ও স্পর্শকাতর জায়গা। আজও মৌলভীবাজার জেলায় আসল কোন PPE আসেনি। কোন মানসম্পন্ন ‘মাস্ক’ আসেনি। কিছু ‘সার্জিক্যাল মাস্ক’ দেয়া হয়েছে যা ‘করোনা ভাইরাস’ প্রতিরোধে মাত্র ৮০%ভাগ সক্ষম। প্রয়োজন ছিল N95 মানের ‘মাস্ক’ যা ৯৫%ভাগ কার্যকর। অন্ততঃ ‘ফিভার কর্ণার’এর জন্য এই ‘মাস্ক’ খুবই প্রয়োজনীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘ফেইচ শিল্ড’ একেবারেই দেয়া হয়নি। রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য এটি অতীব প্রয়োজনীয় একটি সরঞ্জাম। তার মতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে এতো চিকিৎসাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।
অবশ্য মৌলভীবাজার বিএমই, এক থেকে দেড় মাস চলবে এমন পরিমান ‘সার্জিকেল মাস্ক’ জেলার সদর হাসপাতালে দিয়েছে বলে তিনি তার ভিডিও তে বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে প্রত্যেক জেলায় করোনা কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সেখানে কোন বিএমই প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তিনি তার ভিডিও বক্তব্যে রোগীদের রোগ গোপন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ডা. শাব্বিরের এই পরামর্শের বিপরীতে বলতে চাই যে রোগ কি হয়েছে রোগী আগে থেকে জানবে কি করে? ডাক্তারকেইতো বলতে হবে রোগ কি! সুতরাং রোগ গোপন করার বক্তব্যটি সঠিক বলে মনে হয়না। সারা বিশ্বব্যাপী করোনা নির্ণয়ের জন্য সকল সরকারই নিজেদের ক্ষমতানুযায়ী আগাম রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্যদিকে, মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের সিদ্ধান্তের দফাগুলির উপর খেয়াল করে চোখ বুলালে দেখা যাবে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগী ছাড়া নতুন অন্য কোন রোগী ভর্তি করা যাবে না। এই একটি বিষয় ছাড়া এই হাসপাতালে আর যে সেবাগুলি বিদ্যমান আছে তার প্রায় সবগুলোই চালু থাকবে। তা’হলে হাসপাতালের কর্যক্রম বন্ধ ঘোষণার মূলে কি? একটু গভীরে গিয়ে খুঁজলে তাদের এমন সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ একটিই পাওয়া যায়; সাধারণ মানুষদের তারা এই সংবাদই দিচ্ছেন যে হয় করোনা বলে ভর্তি হও নতুবা ব্যক্তিমালিকানাধীন চৌর্য্যবৃত্তির ব্যবসায়ী হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হও। শুধু কি তাই তাদের এমন অম্লমধুর সিদ্ধান্তকে একেবারে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব থেকে শুরু করে ১১টি সরকারী দফতরে পাঠিয়েছেন। সত্যি তাদের বাহবা না দিয়ে পারা যায় না!