সৈয়দ ছায়েদ আহমদ,শ্রীমঙ্গল থেকে।। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বৃদ্ধদের পুণর্বাসনের লক্ষে নেয়া ‘অবসর নিবাস’ প্রকল্প দীর্ঘ ১৬ বছর ঝুলে থাকার পর আলোর মুখ দেখছে। তবে অবসর নিবাস হয়ে নয়! ‘অবসর প্রকল্প’ এখন রূপ নিচ্ছে মেডিকেল রিসোর্ট’এ। ২০০১ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় এই প্রকল্প’এর জন্য ৫.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফিনলে চাবাগান ঘেরা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে অধিগ্রহনকৃত জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সে সময় মোট ব্যায় ধরা হয়েছিল ১৬ কোটি টাকা। গণপূর্ত বিভাগের অধীন এই প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাউন্ডারী দেয়াল ও মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণের উপযোগী করার পর সব কিছু থেমে যায়। জানা গেছে, ২০০০ সালে প্রবাসী অধ্যুষিত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেখে যাওয়া নিঃস্বঙ্গ পিতা-মাতাদের দূর্ভোগ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে তাদের পূণর্বাসনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় শ্রীমঙ্গলে ‘অবসর নিবাস’ প্রকল্প হাতে নেয়। বয়োবৃদ্ধদের সামান্য খরচে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা সুবিধা, চিত্ত-বিনোদন, খেলা-ধূলা, শরীর চর্চা, ধর্ম চর্চাসহ লেখাপড়ার সুযোগ রেখে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিলো।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করার পর ১৬ বছর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকার পর সিলেট অঞ্চলের মানুষের চাওয়া পাওয়ার অবসর প্রকল্পটিই এখন অবসরে চলে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগের প্রকল্প’র জায়গায় এখন নতুন করে ‘মেডিকেল রিসোর্ট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পিপিপি’র আওতায় ‘অবসর আমার আনন্দ ভুবন’ নামের এ রিসোর্ট নির্মাণে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে গত ৪ ডিসেম্বর। সরকারি-বেসরকারী অংশীদারিত্বে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের যৌথ অংশীদারিত্বে এ মেডিকেল রিসোর্টে ১০০টি নিরাপদ আবাসন ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, খোলা মাঠ, জলরাশি ও সবুজের বাগান থাকবে। রিসোর্টটিতে প্রবীণদের জন্য আনন্দময় ও স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক পরিবেশে অবকাশ যাপনের নির্মল সুযোগ থাকবে। চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে এই রিসোর্ট নির্মাণে গত ৪ডিসেম্বর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো.আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
ইউনিভার্সেল মেডিকেলকলেজ হাসাপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, দেশের প্রথম এ মেডিকেল রিসোর্ট তৈরিতে ভূমি ও অন্যান্য সহযোগিতা দেবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। বাকি কাজ করবে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বুধবার সরেজমিন প্রকল্প এলাকা গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ঝুলানো সাইন বোর্ড এরই মধ্যে কে বা কারা খুলে নিয়ে গেছে। দেখভালের লোকের অভাবে বাউন্ডারী দেয়ালের উপরের অংশে নির্মিত লাখ লাখ টাকার গ্রীলগুলি চুরি হয়ে গেছে। অনেক পিলারের কংক্রিট ভেঙ্গে রড চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা, বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণের সাথে মাটি ভরাটের কাজ সংযুক্ত থাকলেও ভেতরে মাটি ভরাট করা হয়নি উল্টো প্রকল্প এলাকা থেকে কেউকেউ খুঁড়ে মাটি নিয়ে গেছে। প্রকল্প এলাকার বিস্তৃীর্ণ প্রান্তর গরু-ছাগলের চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো:সুয়েব হুসেন চৌধুরী জানান, ‘অবসর নিবাস’ নামের একটি প্রকল্প আছে। তবে তিনি নতুন করে একটি চুক্তির কথা শুনেছেন। তবে অফিসিয়েল কোন পত্র পাননি। তাই এব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নেই।