মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। তাজমহল কমপ্লেক্স মসজিদে নামাজ পড়া যাবেনা এমন হুকুম দিয়ে মসজিদের অজুর পানিরক্ষনাগার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে এএসআই, আগ্রা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তারা পানিরক্ষনাগারে তালা দিয়েছে। আজ শনিবার ১০ই নভেম্বর ভারতের প্রভাবশালী হাওয়াই পত্রিকা “ন্যাশনেল হেরাল্ড” এ খবর দিয়েছে।
খুবই ক্ষোভ প্রকাশ করে আগ্রা শহরের মুসলমানেরা ন্যাশনেল হেরাল্ডকে বলেছেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অজুর পানির রক্ষনাগারে তালা লাগিয়েছে। এখানে শত শত বছর ধরে মুসলমানগন নামাজ পড়ে আসছেন। সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মানের সময়ই এই মসজিদ নির্মান করেছিলেন এবং তখন থেকেই এখানে নামাজ পড়া হয়ে আসছে। এ মসজিদে নামাজ পড়ানোর জন্য একজন ইমাম আছেন যাকে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে মাসে ১৫ রুপি সম্মানী দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমান ইমাম ২০০১সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এর আগে তার বাবা একনাগারে ৫০ বছর ইমামতি করে গিয়েছেন। এটি তাদের বুনিয়াদী পেশা।
৫০ বছর বয়সী জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ’র নেতা আজহার বলেছেন, পায়ের পাতা থেকে দাঁত অবদি আমরা আন্দোলন করে যাবো এবং প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো। আমরা প্রতিবাদ করে আমাদের অসন্তুস্টি প্রকাশ করে দেখাবো। এভাবে কোন কারণ ছাড়া আমাদেরকে নামাজ পড়া থেকে বিরত রাখা সরাসরি আমাদের ধর্মের উপর আক্রমণ। নামাজ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এভাবে কি কোন হিন্দু সম্প্রদায়কে তাদের কোন মন্দিরে গিয়ে পূঁজা করা বন্ধ করে দিতে পারবেন? এটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রকাশ্য বিদ্বেষ দেখানো। কিন্তু এ পর্যায়ে আমরা মুখবুঝে থাকবো না।
আগ্রা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মিথ্যা কারণ দেখিয়ে এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগ্রা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন, অঙ্কিত নামদেভ, গত শনিবারে অজুর পানিরক্ষনাগারে তালা লাগিয়ে দেন। মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী ইব্রাহীম জায়দি কারণ জানতে চাইলে ওই অঙ্কিত নামদেভ জানান যে উচ্চ আদালতের আদেশ আছে, যা গত জুলাই মাসে দেয়া হয়েছে। জায়দি তখন বলেন, চারমাস আগে আদালত বহিরাগতদের এখানে এসে নামাজ পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। স্থানীয়দের উপর নয়। অথচ আমাদের আপনারা সেই আদেশ আজো দেখাননি।
৪৭ বছর বয়সের স্বামী আধাই নামের একজন সুপরিচিত সমাজকর্মী হেরাল্ডকে বলেন, এর আগে কর্তৃপক্ষ তাজগঞ্জের দিকে থাকা দরজা বন্ধ করে দেন, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। তখন কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু এখন তারা অনেকটা নামাজ পড়ায় বাধা সৃষ্টি করেছেন। এ অবস্থায় মুসলমানগন যদি নিরব থাকে তা’হলে হয়তো পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এখানে পূঁজা অনুষ্ঠানের আয়োজন। তিনি আরো বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্থানীয়দের নামাজের জন্য প্রবেশপত্র দিয়েছেন এবং যারা নামাজে আসেন তাদের প্রবেশপত্র দেখিয়ে নামাজে যোগ দিতে হয়। সুতরাং এখানে নতুন করে নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে?
জানা যায়, বিজেপি’র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি লক্ষিকান্ত বাজপায়ী একসময় বলেছিলেন মুসলমানদের অন্যত্র নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তাজমহল পর্যটকদের ভ্রমন ও দেখার জন্য।
আগ্রা শহরের একজন উকীল নাসির ওয়ারসি বলেন, উত্তর আগ্রার বিজেপি এমএলএ জগন প্রসাদ গার্গ ইতিমধ্যেই দাবী করেছেন যে আগ্রার নাম পাল্টিয়ে আগ্রাভন রাখার। কিছুদিন আগে একটি ভূয়া সেবানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে মানুষকে উষ্কানী দিয়ে এলাকায় ঘৃণা প্রচার ও একটি অস্থিরতা জিইয়ে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কষ্টদায়ক হলেও সত্য যে মানুষে মানুষে এই ঘৃণা প্রচারকারীরা তাজমহলকে তাদের লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে অথচ তাজমহল হলো সারা বিশ্বে প্রেমের প্রতিচ্ছবি। তথ্যসূত্র: ন্যাশনেল হেরাল্ড