মুক্তকথা সংগ্রহ॥ সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ্ বা গড বা ঈশ্বর কিছু আছে, এ প্রশ্নটি একবিংশ শতাব্দিকে খুবই উত্তপ্ত করে রেখেছে। ২০১৪ সালে আমেরিকান জরিপ কোম্পানী ‘পিউ’ এর এক জরিপে পাওয়া গেছে, আমেরিকায় ধর্ম বিষয়ে কোন সম্পর্ক রাখেনা এমন মানুষের সংখ্যা শতকরা ২৩ভাগ। এই ২৩ভাগেরও শতকরা ৩৩জন বলেন যে তারা গড বা ভগবানে বিশ্বাসই করেন না। এই পরিমাণ ২০০৭ সালের জরিপের সংখ্যা থেকে শতকরা ১১জন বেড়েছে। মানুষের মাঝে এ নমুনার ঝোঁক বা প্রবণতার লৌহকাঠিণ্য বাড়তে থাকলেও রবার্ট এইচ. নেলসন নামের একজন অধ্যাপক বিতর্কের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে এক অতিভৌতিক গড বা ঈশ্বর বিশ্বাসের সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। তিনি ২০১৫ সালে লিখিত তাঁর বই-“God? Very Probably: Five Rational Ways to Think about the Question of a God,” এ আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে কি-না তা দেখতে গিয়ে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান(physics), মানব সচেতনতার দর্শন(the philosophy of human consciousness), ক্রমবিকাশমান জীববিজ্ঞান(evolutionary biology), অংক(mathematics), ধর্ম এবং ঈশ্বরতত্ত্বের ইতিহাস পড়ে দেখেছেন। তিনি অবশ্য একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবেই প্রশিক্ষন প্রাপ্ত তবে অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে, পরিবেশবাদী এবং সৃষ্টি তত্ত্ব বিষয়ে কাজ করে আসছেন সেই ১৯৯০ সাল থেকে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ফিলিপ ডেভিস এবং রেউবেন হের্স এর মত একাধিক অংকশাস্ত্রবিদ আলোচনা করে দেখেছেন যে দেখারমত কোন বস্তুগত অবস্থান না থাকা সত্ত্বেও অংক স্বাধীনভাবেই বিরাজমান আছে। অংকদুনিয়ার ধারণা ও নিয়ম-কানুনের বাস্তবতা আবিষ্কার করা, এটি অংকশাস্ত্রবিদদের কাজ। পূর্বাভাষের নিয়মানুসারে এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষন নিশ্চিত করে বস্তুবিজ্ঞানীরা এর পরে অংককে স্থাপন করবে। কিন্তু আধুনিক অংক সাধারণতঃ তৈরী করা হয়েছে কোনরূপ পূর্ব পর্যবেক্ষন ছাড়াই এবং বর্তমান অনেক গাণিতিক নিয়মকানুনের বাস্তব অবস্থানগত কোন ফর্দ নেই। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উদাহরণ স্বরূপ, ১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকত্বের সাধারণ তত্ত্বের ভিত্তি ছিল আইনষ্টাইনের থেকেও ৫০ বছর আগে অসীম খ্যাতীর অধিকারী জার্মানীর অংক শাস্ত্রবিদ বার্ণার্ড রিয়েমেন এর তত্ত্বীয় বা ধারণাগত অংকের বিকাশের উপর। যে তত্ত্বের বুদ্ধীবৃত্তিক সৃষ্টিকালীন সময়ে জানামত কোন বাস্তবিক অনুশীলন বা প্রয়োগ ছিল না। কোন কোন বিষয়ে, প্রকৃতি বিজ্ঞানী অংকের আবিষ্কারও করে থাকেন। আইজাক নিউটনও ১৭ শতকের বিশ্বখ্যাত গাণিতিকদের মাঝে এমনি এক বিশ্বখ্যাত মহাগাণিতিক ও প্রকৃতি বিজ্ঞানী বলে স্বীকৃত। অন্যান্য প্রকৃতি বিজ্ঞানীগন, সৌর আবর্তন পদ্বতির ব্যাখ্যা করে এমন অংকসূত্রের সমাধানে নিউটনের সহায়তা চাইতেন। ক্যালকুলাস বা উচ্চাঙ্কের গণিত আবিষ্কারের এক পর্যায়ে তিনি মাধ্যাকর্ষণের অংকসূত্রে তা পেয়ে গেলেন। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যাই হোক, ওই সময় কিন্তু বহু লোক প্রথম প্রথম নিউটনের ওই সূত্রকে রহস্যময় ভূতপ্রেতাদির গুপ্তবিদ্যা মনে করে প্রতিরোধ করেন। তাদের প্রশ্ন- কিভাবে সৌর জগতের দু’টি দূরবর্তী বস্তু একে অপরের বিপরীতে কাজ করবে একটি সুনির্দিষ্ট গাণিতিক নিয়মে! নিউটন তার জীবনে তীব্র উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছেন একটি প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা খুঁজে পেতে কিন্তু জীবনের শেষে তিনি বললেন-“এটাই ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা।” |