1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
'আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো' - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

‘আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো’

মোঃ কাওছার ইকবাল॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৯৮ পড়া হয়েছে
শ্রীমঙ্গল

বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী পূজার দৃঢ় প্রত্যয়

‘আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো’

বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী পুজা ভট্টাচার্য্য। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় প্রত্যয়ে সে এখন সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। কৃষক বাবার বড় সন্তান। চিকিৎসকের পরামর্শে কানে শোনার যন্ত্র ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু সেটার মাধ্যমে শুনার চেয়ে তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। সেটি আর ব্যবহার করা হয় না। এভাবেই চলে তার লেখাপড়ার পাঠ। বইয়ের অক্ষর দেখে দেখেই তার পড়াশোনা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল এন্ড কলেজে পড়ুয়া পুজার ইচ্ছেশক্তিটা প্রচন্ড। সে তার মাকে ইশারায় বলে, সে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হতে চায়, অনেক বড় হতে চায়। তার বাবার নাম রনদা ভট্টাচার্য ও মায়ের নাম পূরবী ভট্টাচার্য। ছোটভাই রাহুল ভট্টাচার্য ভিমসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্র। মা-বাবা শংকিত তাদের আদরের কন্যা পূজা শারিরীক প্রতিবন্ধকতার মাঝে কি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে? তবে মা-বাবার আদর যত্ন ও উৎসাহে পূজা খুবই উৎফুল্ল। এমনই এক দৃঢ়চেতা প্রতিবন্ধী শিশুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও সুরক্ষায় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সমাজের দ্বায়বদ্ধতা জরুরি।

উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা ভিমসীর পাড়াগাঁয়ের দারিদ্র্য কৃষক রনদা ভট্টাচার্য ক্ষেত কৃষি করেই সংসারের খরচ মেটান। বড় সন্তান একমাত্র কন্যা পূজা বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী। পাথর চাপা দুঃখ ভূলে যান মেয়ের আনন্দ দেখে। জন্মের পর প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও একসময় বুঝতে পারেন তাদের মেয়েটি শুনেও না, বলতেও পারে না। ছোট বেলা থেকেই পূজার বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে বই কিনে দেন। দেখে দেখে শেখা, তারপর লিখে লিখে পড়া আদায়। এরপর স্কুলে ভর্তি। পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়ে আজ সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

 

 

হিমালয়সম উচ্চতা নিয়ে আশায় বুকবেঁধে যে প্রতিবন্ধী কিশোরী লিখা-পড়া করছে তারই নাম পুজা। কন্যাসম পুজাকে আমাদের অভিনন্দন!

 

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পূজা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি নিজেকে নিরাপদও ভাবে। পড়ালেখার প্রতিও তার বেশ মনযোগ। স্বাভাবিক বাচ্চাদের মত না হলেও তাকে আলাদা করার কোন সুযোগই নেই। পাঠদানে বা আলাপচারিতায় পূজার প্রতি করুণা প্রদর্শন বা স্নেহ প্রকাশ করার কোন সুযোগই পান না শ্রেণি শিক্ষকরা।

নতুন শিক্ষাক্রমে বার্ষিক মূল্যায়নের সময় একক ও দলীয় কাজে সে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা পাচ্ছে বলে সে অত্যন্ত খুশি। দলীয় কাজে তার সহযোগিতার মনোভাব চোখে পড়ার মতো।

জানতে চাইলে পূজার মা পূরবী ভট্টাচার্য বলেন, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। মাগো, এভাবে কি লেখাপড়া করা যায়, এত কষ্ট করে কতটুকুই বা এগোতে পারবি। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, এসব বললেই সে রেগে গিয়ে ঈশারায় বলে, আমি তোমাদের মতো কাজ করবো না। আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হবো। তোমাদের অনেক টাকা দিব। বাবা আমাদের জন্য এত কষ্ট করে। তোমাদের কষ্ট আমার ভালো লাগে না।

ছবিতে- সহপাঠীদের সাথে ক্লাসে মনোযোগী বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী পূজা(ডান থেকে ২য়)

 

স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পূজার মা পূরবী ভট্টাচার্য আরো বলেন, সবার দোয়া ও আশীর্বাদে তাদের পূজা যেন সুস্থ থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে শ্রেণি শিক্ষক জহিরুল মিঠু বলেন, হঠাৎ করে বুঝা না-গেলেও দলীয় কাজে তার সহযোগিতার মনোভাব চোখে পড়েনি বলে তার নামটা জানতে চেয়ে ছিলাম, তখন থেকেই তাকে চিনি।

তার মায়ের কাছে পুজার ইচ্ছা ও প্রত্যয় শুনে আমি তাজ্জব। অথচ পঞ্চ-ইন্দ্রিয় সক্রিয় থাকার পরেও অনেক মানুষই তার চেয়ে পিছিয়ে আছে। আমি মাঝে-মধ্যেই অনেককে পুজার উদাহরণ দেই। দেই তার ক্লাসের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরও, যারা পুজাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT