মৌলভীবাজারে “মনু নদী প্রকল্পে’র বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন অংশে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে শহর রক্ষা বাঁধের নকশা বরাবরে অন্যের মালিকানা থাকায় ওই জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পাউবো’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে আগাম বন্যার পূর্বে বাঁধের কাজ সমাপ্ত না হলে মনু বাহিত বান-ভাসিতে জেলার ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। বর্ষাকালে মনুবাহিত বানের জলে জেলার বিস্তর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে এবং তছনছ করে করে দেয় বাড়ী-ঘরসহ সম্ভাবনাময় ক্ষেতের ফসল। জানা গেছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব নাজমুল আহসান’র নেতৃত্বে রাজধানীতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরো জানা যায়, ৯শ ৯৬ কোটি টাকার কাজের একাংশের কাজ শুরু করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড(বাপাউবো) মনূ প্রকল্পের ওই কাজটি শুরু করে ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল। কাজটি শেষ হবার কথা ছিল চলতি বছরের ৩ জুন। ওই প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় সামান্য কিছু নদী রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হলেও মৌলভীবাজার শহরের শাহবন্দর থেকে নয়াসেতু এলাকার সাড়ে ৬ কিলোমিটার জায়গায় এসে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কাজের শুরুতে ওই এলাকায় ১ কিঃমিঃ জায়গায় মাটি খুড়ে রাখলেও বিফলে যাচ্ছে প্রাথমিক ব্যয়।
খুদ মৌলভীবাজার পাউবো কার্যালয় জানিয়েছে, ওই কাজের সাড়ে ৬ কিমিঃ এর অধিকাংশ অংশের মালিকানা সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও ব্যক্তি মালিকদের। এরই মধ্যে সড়কের দেড় কিঃমিঃ জায়গা পাউবোর’র সাথে সড়ক বিভাগের মিশে গেছে। তারা আরো জানায়, শুধু ওই জায়গায় বাঁধের কাজ বাদ দিয়ে বিকল্প জাল-পাথর দিয়ে ‘ফ্লাড ওয়াল’ করলে সরকারের খরচ খুব বেশী না হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হবে চিরস্থায়ী। জমি অধিগ্রহণের চেয়ে স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বেশী গ্রহনযোগ্য।
এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ একটি লম্বা প্রক্রিয়া। অধিগ্রহণ না করা সড়কে পাউবো কোন প্রকার শহর রক্ষা বাঁধের কাজ করার অধিকার রাখে না? নতুন করে ভূমি অধিগ্রহন কাজে সময় লাগবে বিস্তর। আর এ সময়ের মধ্যে আসন্ন বন্যায় তচনছ হয়ে যাবে জনজীবন। স্থানীয়দের অভিযোগ থেকে জানা যায়, গেলো বছর জুড়ে ওই বাঁধের প্রায় ৬ কিমিঃ এলাকা থেকে দিন-দুপুরে কোটি কোটি টাকার বৃক্ষ কেটে নেয় প্রভাবশালীরা। জেলা প্রশাসন, সড়ক বিভাগ, ব্যক্তি মালিক ও পাউবোর মালিকানায় থাকা এসব জায়গার বৃক্ষ কেটে নেবার পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানালেও আজো কোন সিদ্ধান্তে পৌছায়নি। এতোসবের ফলে নিজেদের জমি থাকার পরেও বাঁধের কাজ হয়নি। এ বিষয়ে সচেতন মহলের ধারণা, মাটির বাঁধের চেয়ে জাল পাথর দিয়ে “বন্যা দেয়াল” নির্মাণ একটি স্থায়ী ব্যবস্থা।
কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যান আপ্পান আলীর কাছ থেকে জানা যায় মনু পাড়ের ব্যক্তি মালিকরা নিজেদের জমি অধিগ্রহণ করা হোক তা তারা চান না। স্থানীয় তহসীল অফিস থেকে ঠিকাদারদের আপত্তি জানানো হয়েছে। এতে করে নতুন করে অধিগ্রহন কোন ফল নিয়ে আসবে না বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। খরচ একটু বেশী হলেও তাদের পরামর্শ এসমূহ এলাকায় “বন্যা দেয়াল” নির্মাণই যুক্তিযুক্ত হবে।
একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায় যে, ওই বাঁধ নির্মাণ করতে নদীর চর থেকে মাটি আনতে এখন বাঁধা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। এ কারণে বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, মনু নদে বিভিন্ন মালিকানায় থাকা জমিতে বাঁধ নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। যদিও ব্যয়টা একটু বেশী তারপরও এমনসব চিন্তা থেকে জেলার বন্যা মোকাবেলায় জাল পাথর দিয়ে “বন্যা দেয়াল”ই উপযুক্ত বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।