’ফিতরা’ আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো ভাঙ্গা, ভঙ্গকরা বা আরো সুন্দর শব্দ দিয়ে বললে বলা যায় ভঞ্জন। যা আরবীতে বলা হয় ‘সদকাতুল ফিতর’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ তাকেই বাংলায় বলা হয় ফিতরা। ফার্সি, উর্দু ও হিন্দিতেও ওই একই ফিতরা শব্দ দিয়ে বুঝানো হয়ে থাকে। উপবাস বা শেষ রোজার দিন বা রোজা সমাপনের দিন আরো মধুর করে বললে উপবাস ভঞ্জন দিবসে স্রষ্টার নামে গরীব-দুঃখীকে এ সহায়তা দেয়া হয় বলে একে ডাকা হয় ‘ফিতরা’ শব্দ দিয়ে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্ত বিপদ আসন্ন-এর থেকে বাঁচার মনোবাসনায় গরীব মানুষকে স্রষ্টার নামে সাহায্য করার প্রকাশ এই ‘সদকা’ শব্দ দিয়ে হয়ে থাকে। এর গুরুত্ব ও তাত্পর্য ব্যাপক। এটি ধর্ম ইসলামের একটি সার্বজনীন নীতি ও শিক্ষা। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল বর্তমানের অত্যাধুনিক এই সময়ে বিশ্ব মানব সমাজ এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে যে এই ‘সদকা’-‘ফিৎরা’ নামের গরীব দুঃখী মানুষের সহায়তা অর্থ স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তব আর মসজিদের নামে নিয়ে নেয়া হচ্ছে নিঃসংকোচে। আর চলমান এই ডিজিটাল যুগে সেবা সংস্থার ছড়াছড়ি এতোই সম্প্রসারিত হয়েছে যে কোন একজন গরীব মানুষকে সরাসরি দাতার কাছ থেকে তার প্রাপ্য সাহায্য বা সহায়তার অর্থটুকু পাওয়া খুবই দুষ্কর! বাধ্য হয়ে এসকল মানুষকে কোন না কোন সেবা সংস্থার দ্বারস্ত হতে হয়। ‘ফিতরা’ নামক এই সহায়তার টাকায় গরীব মানুষজন পবিত্র ঈদের খুশীতে অংশ নিতে পারবে, পেট ভরে দুমুটো খেতে পারবে এমন মহতি লক্ষ্যেই এর প্রচলন হয়েছিল কিন্তু এখন এই ফিৎরা আর সরাসরি দেয়া হয় খুবই কম। এখন ফিৎরা আদায় করা হয় মাইক বাজিয়ে বিভিন্ন নামে। অবস্থা এমনই হয়েছে যে ফিৎরা আদায় কিছু মানুষের পেশায় পরিণত হয়েছে। ফলে আসল পাওয়ার মানুষের হাতে পৌঁছার আগে ফিৎরার টাকায় ভাগ বসে অন্যদের। খাঁটী ধর্মের চিন্তা থেকে এরকমটি খুবই লজ্জ্বাজনক বলেই মনে করি। কোন কোন ধর্মীয় গবেষক ‘ফিৎর’ শব্দের অর্থ বলেন ‘সৃষ্টি’ বা ‘ব্যক্তিসত্তা’। যেহেতু সকল মানুষকেই উপবাস ভঞ্জনের এই সহায়তায় অংশ নিতে হয় তাই একে ‘সদকাতুল ফিতর’ বলে আরবীতে। বাংলায় গরীব-দুঃখীকে উপবাস ভঙ্গের সাহায্য বা সহায়তা। এই দান বা সহায়তাকে বহু ধর্মীয় গবেষক ঈদের আনন্দকে সার্বজনীন করার উপায় বলেই মনে করেন। ধনী-গরীব সকলেই যাতে ঈদের আনন্দে অংশ নিতে পারে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। বিঃদ্রঃ ১৪২৮ বাংলা, এবারের ফিৎরা(গরীব-দুঃখীদের সাহায্য) কমপক্ষে ৭০টাকা আর সর্বোচ্চ ২৩১০টাকা। |