ওমর ফারুক নাঈম।। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে প্রসূতির সিজার করেছেন নার্স। প্রসূতির পেটে কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে নবজাতকের গলা কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এমন এক ভয়ঙ্কর আনাড়ি ডাক্তারীর খবর পাওয়া গেছে গণমাধ্যমে। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গত রবিবার ১৪ই মার্চ এ ঘটনা ঘটে।
শুধুই যে আনাড়ি বা ভয়ঙ্কর তা নয়! তার চেয়ে আরো ভীতিপ্রদ তথ্য গণমাধ্যম থেকে জানা যায় যে প্রসূতির পেট কাটার সময় নবজাতকের গলা কেটে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রসবের কাজ শেষ না করে অপারেশন থিয়েটারে মূমুর্ষ মা-শিশুকে রেখে পালিয়ে যায় নার্সরা। পরে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে স্বজনরা দেখেন নবজাতকের অর্ধেক মায়ের পেটে এবং মাথা ও হাত বাইরে। এ অবস্থায় ওই মা-শিশুকে অন্য ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে মৃত নবজাতকের জন্ম হয়। গত বৃহস্পতিবার শিশুটির বাবা তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন যা আলোড়িত হয় প্রচণ্ডভাবে।
প্রসূতির স্বামী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুমড়াকাপন গ্রামের বাসিন্দা মো. আওয়াল হাসান এ বার্তা পরিবেশককে বলেন, রোববার ভোরে স্ত্রীর প্রসব ব্যথা ওঠে। অবস্থা খারাপ দেখে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রথমে হাসপাতালের নার্সরা রোগী দেখে জানান স্বাভাবিকভাবেই সন্তান হবে। এরপর সকাল ১০টার দিকে একজন ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বলেন স্বাভাবিকভাবেই সন্তান হবে। কিছুক্ষণ পর নার্সরা তাকে বলেন বাচ্চা প্রসব করাতে পেট কাটা লাগবে। সিজারের ওষুধ আনার জন্য একটা কাগজ দেন তারা। ওই সময় হাসপাতালের এক ব্যক্তিকে ওষুধ আনার জন্য তার সঙ্গে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ওই ব্যক্তির সাথে না গিয়ে অন্য একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনেন। ওষুধ আনার পর নার্সরা জানান রক্ত লাগবে। আগে তার সঙ্গে যে লোককে ফার্মেসিতে পাঠানো হয়েছিল তাকে দেখিয়ে নার্সরা বলেন, তার কাছে রক্ত আছে, পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। প্রসূতির স্বামী তখন পাঁচ হাজার টাকা না দিয়ে তিন হাজার টাকায় বাইর থেকে এক পাউন্ড রক্ত কিনে আনেন।
রক্ত কিনে এনে দেখেন তার স্ত্রীকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য নার্সরা নিয়ে গেছেন। কিছুক্ষণ পর এক নার্স এসে বলেন আপনার বাচ্চা আর বেঁচে নেই। মায়ের অবস্থা ভালো না, মাকে বাঁচাতে হলে এখানে একটা সই দেন। তিনি স্ত্রীর অবস্থা বিবেচনায় বিনা বাক্যব্যয়ে সই দিয়ে দেন। কারণ সে মূহুর্তে স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চার মাকে বাঁচানোই ছিল তার কাছে প্রধান কাজ।
প্রসূতির স্বামী মো. আওয়াল হাসান আরো বলেন, “যখন ভেতরে গেলাম তখন দেখলাম নবজাতকের মাথা-হাত বাইরে, বাকিটুকু মায়ের পেটে। নবজাতকের হাত ছিঁড়ে গেছে, গলা কেটে ফেলেছেন তারা। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে অনবরত। তখন আমি দৌড়ে গেলাম নার্স আনার জন্য। এসে দেখি কোনো নার্স নেই। সবাই পালিয়ে গেছেন। এ সময় আমি চিৎকার শুরু করি। তখন হাসপাতালে কর্মরত শোয়েব নামে এক ব্যক্তি আমার সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে। সে আমার ঘাড় ধরে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। সে বলে রোগী নিয়ে এখনই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যা। এ সময় কান্না করতে করতে রোগীকে বাঁচানোর আকুতি জানাই আমি। কারও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে রোগী নিয়ে পাশের আল-হামরা হাসপাতালে যাই। সেখানে নিলে মায়ের পেট থেকে মৃত বাচ্চা বের করেন চিকিৎসকরা। আমি অসহায় মানুষ, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।”
মৃত নবজাতকের মা সুমনা বেগম বলেন, “যখন আমার স্বামী নার্সদের বলে দেয়া লোকের কাছ থেকে রক্ত না কিনে বাইরে রক্ত কিনতে যায় তখন নার্সরা আমাকে জোর করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। আমি তাদের বললাম একটু আগে বললেন সিজার লাগবে। আমার স্বামী রক্ত আনতে গেছে। তখন তারা আমাকে ধমক দেন। সেই সঙ্গে তারা আমার পেটে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকেন। পশুর মতো পেট থেকে বাচ্চা টানতে শুরু করেন তারা। এতে আমার বাচ্চার হাত এবং গলার রগ ছিঁড়ে যায়। পরে তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যান। তাদের কথা মতো ওই লোকের কাছ থেকে রক্ত না কেনায় আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছেন তারা।”
এ বিষয়ে আল-হামরা হাসপাতালের ম্যানেজার বলেন, আমাদের যে ডাক্তার অপারেশন করেছেন তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন এ ধরনের কান্ড দেখে। বিষয়টি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রত্নদ্বীপ বিশ্বাস তীর্থ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আজ মাত্র এখানে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পার্থ সারথি দত্ত কানুনগো গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার দুই দিন আগে থেকে বাচ্চাটির নড়াচড়া ছিল না। বাচ্চা যদি মায়ের গর্ভে মারা যায় অনেক সময় ফুলে যায়। ওই অবস্থায় পেট কেটে বাচ্চা বের করতে হয়। হাসপাতালে ওই দিন নয়টি সিজার হয়েছে। তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন। নার্সরা সিজার করেনি, ডাক্তাররাই সিজার করেছেন।