মৌলভীবাজার, ১৬ জুলাই ২০২১ ইং
দেশে সংক্রমনের হাতে গোনা কয়েকটি জেলার মধ্যে রেড জোনে মৌলভীবাজার। অথচ সংক্রমণের ১৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও এ জেলায় নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্র (পিসিআর ল্যাব) স্থাপন হয়নি। পিসিআর ল্যাব স্থাপনে প্রবাসী অধ্যূষিত এজেলার বাসিন্দারা একাধিকবার দাবি ও আন্দোলন করে আসলেও কর্ণপাত করছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জেলাভিত্তিক নমুনা পরীক্ষা এবং রোগী শনাক্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩১ মার্চ সারা দেশে শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, সে জায়গায় মৌলভীবাজারে ছিল ২২ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই দিন দেশের শীর্ষে ছিল মৌলভীবাজার। করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে এমন জেলাগুলোতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকা জেলায় রোগী শনাক্তের পরিমাণ কম। এসব জেলায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতেও সময় বেশি লাগছে। দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানোর সময় অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক শর্ত রোগী শনাক্ত করা। পরীক্ষা যত বেশি হবে আক্রান্ত ব্যক্তিও তত বেশি শনাক্ত হবে। রোগী শনাক্ত হলে এবং এরপরের ধাপগুলো ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন যথাযথভাবে পালন করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু দেশে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না।
সিভিস সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪২ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৫৪ জন।
এদিকে এজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। সময় লাগে ৩/৪ দিন। আবার কখনও কখনও ৫ দিনও লেগে যায়। প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০ জন রোগীর পজেটিভ আসছে। নমুনা দেয়ার পর থেকে ফলাফল আসার পূর্ব পর্যন্ত রোগীরা বাহিরে ঘুরা ফেরা করছেন এবং পরিবারের সবার সাথে একত্রে উঠা বসা করছেন। অথচ দেখা গেছে তাদের পজেটিভ এসেছে। তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন আরও অনেক।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এনিয়ে দায়সাড়া বক্তব্য দিচ্ছে। গতানুগতিক কাজের বাহিরে গিয়ে কিছু করার চিন্তা করছে না জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দায় সাড়া কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট জেলার সচেতন মহল। তাদের দাবি জেলা সদর হাসপাতালে স্থাপনকৃত জিনএক্সপার্ট মেশিন দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৭ মাসেও এর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে আছে। এখানে পরীক্ষা করা হলে ফলাফল আসতে এতো সময় লাগতো না। সংক্রমনও কমে আসতো।
সদর হাসপাতালে নমুনা দেয়া আব্দুস সামাদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহের ৪/৫ দিন পরে ফলাফল আসে। এ সময়ের মধ্যে অনেক পজেটিভ রোগীর মাধ্যমে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাজ্য অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল আম্বিয়া বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের অর্থনীতিক উন্নয়নে মৌলভীবাজারের প্রবাসীদের ভুমিকা কোনো অংশে কম নয়। অথচ এ জেলাকে সব সময়ই সরকারি বরাদ্দের দিক থেকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।
করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের দাফন কাফন কাজে নিয়োজিত শেখ বোরহান উদ্দিন(রহ.) ইসলামী সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, সংক্রমনের শুরু থেকেই মৌলভীবাজারে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আমরা দাবি করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।
সিভিল সার্জন ডা: চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, একাধিকবার চাহিদা পাঠানো হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সরকারি সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জিনএক্সপার্ট মেশিন দিয়ে করোনা পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অনেক ব্যয় বহুল। যার কারণে আমরা এদিকে আগাতে পারছি না।